সর্বশেষ সংবাদ ::

সোনাতলায় যমুনা নদীর মাঝ দিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ অর্থাভাবে বন্ধ

বগুড়া সংবাদ : বগুড়ার সোনাতলায় যমুনা নদীর মাঝ দিয়ে সড়ক নির্মাণ আংশিক কাজ অর্থ অভাবে বন্ধ রয়েছে। বাকি কাজ করার ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরদাবী এলাকাবাসীর।
সোনাতলা উপজেলার অন্তর্গত তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি বন্যা কবলিত ও নদী ভাঙ্গন এলাকা। এ ইউনিয়নের শুকরু মিয়ার বাড়ির সামনে মরা নদী। কিছু দূরে পূর্ব দিকে অবস্থিত মুল যমুনা নদী। মাঝখানে বৃহৎ চর। চরে উৎপাদন হয় নানা প্রকার ফসল। নদীর দুই পাড়ে বসবাস করে কয়েক হাজার মানুষ। বর্ষাকাল-সহ বছরের অধিকাংশ সময়ে নদীতে পানি থাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা যোগে নদী পাড়াপাড় হয় কৃষক,শ্রমিক,শিক্ষার্থী ও অন্যান্য শ্রেণি পেশার মানুষ। একবার খেয়া নৌকা মিছ হলে তো সময় মিছ। নদী পাড়াপাড় হতে গিয়ে বহুবার ঘটেছে নৌকা ডুবির ঘটনা। ফলে অনেকে যথা সময়ে গন্তব্য স্থলে পৌঁছিতে পারেনা। এছাড়া চরাঞ্চলের বাড়ি-ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে সড়ক কিংবা সেতু না থাকায় ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। হাট-বাজারে ফসল ও গবাদি প্রাণি আনা-নেয়া করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। নদী পাড়াপাড়ের বিষয়টি বড় দুর্ভোগ। দুর্ভোগ লাঘবে গত জানুয়ারি মাসে চুকাই নগর এলাকার এন্তেজার মাষ্টার, জামিরুল মেম্বার, ছানাউল ইসলাম ও হাজী ছারোয়ার-সহ বেশকিছু সচেতন মানুষ দীর্ঘদিন আগে এলাকায় একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মানুষ,গবাদি পশু, মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি,ঘোড়ারগাড়ি,গরুর গাড়ি,ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে নদীর মাঝ দিয়ে মজবুত ও টেকসই সড়ক নির্মাণ করতে হবে। যেমন কথা, তেমন কাজ। তারা বর্তমান সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামানিকের মাধ্যমে গত ২০ ফেব্রæয়ারি ভূমি রক্ষা ও সড়ক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে নেন। তখন থেকে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেন। যেহেতু কাজটি বড়। সেহেতু উদ্যোক্তারা সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। উদ্যোক্তাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো নদীর পশ্চিমে শুকরু মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন রাস্তা থেকে পূর্ব দিকে সুজালেরপাড়া গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত দৌর্ঘ্যে সাড়ে ৫ হাজার ফুট সড়ক নির্মাণ করতে হবে। প্রস্থও যথেষ্ট। এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৮০ পার্সেন্ট। এমতাবস্থায় লোকজন প্রায় সারাক্ষণ সহজেই এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারছে। অর্থ অভাবে গত প্রায় তিন মাস ধরে বাকি ২০ পার্সেন্ট কাজ বন্ধ রয়েছে। বাকি ২০ পার্সেন্ট সড়কের কাজ শেষ হলে সড়কটির দুইধারে বøক ও জিওব্যাগ স্থাপন করা জরুরী। লাগাতে হবে বিভিন্ন গাছের চারা ও ঘাস। তবেই সড়কটি টেকসই বজবুত হবে। ইতোমধ্যে দুইধারে কিছু ঘাস ও বিভিন্ন গাছপালা লাগানো হয়েছে। দীর্ঘতম সড়কটির মাঝ পথে নির্মাণ করা হয়েছে বেড়া বিহীন দুটি ঘর। বৃষ্টি এলে ও অতি রোদের তাপে পথচারীরা আশ্রয় নেয় সেখানে। এদিকে জনসাধারণের অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে নদীর মাঝ দিয়ে বিশাল সড়ক নির্মাণ বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সড়কটি দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা সেখানে যায়। পরিপূর্ণ সড়ক নির্মাণ, টেকসই ও মজবুত করার লক্ষ্যে সরকারি অর্থ বরাদ্দ ব্যাপারে উদ্যোক্তারা বগুড়ায় পানি উন্নয়ন বিভাগ অফিসে দীর্ঘদিন আগে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি টীম সরেজমিনে গিয়ে সড়কটি পরিদর্শন করেন এবং উদ্যোক্তাদের এ কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। স্থানীয়রা মনে করেন সড়কটি টেকসই হলে তেকানী চুকাই নগর ও দক্ষিণে পাকুল্লা ইউনিয়নের বহু পরিবারের বাড়িঘর ও ফসল ক্ষতির কবল থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে। উদ্যোক্তারা বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের নদী পারাপার খুব কষ্ট ছিল। যাতায়াতে সুবিধাসহ নানা দিক সুবিধার জন্য জনগণের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যা দৃশ্যমান। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতার জন্য বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তারা আরো জানান, জনগণের টাকায় ও অনেকের স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ কাজ সিংহ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি আংশিক কাজ দ্রæত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। সড়কটির কাজ পরিপূর্ণ হলে একদিকে কয়েকটি গ্রামের মানুষ নির্বিঘেœ যমুনার চরাঞ্চলে ও চরাঞ্চলবাসী বিভিন্ন কাজে বাইরে সহজে যাতায়াত করতে পারবে, অন্যদিকে চরাঞ্চলে ফসল উৎপাদন,ব্যবসা,চিকিৎসা ও শিক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামানিক জানান, সড়ক নির্মাণ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ও জেলা প্রশাসককে অবগত করেছি। আশা করি সড়কটি সুন্দরভাবে করে জনগণের সেবা দিতে পারবো। বগুড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেছেন, সড়ক বা বাঁধটি নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে বাকি সব কাজ অতি সত্বর বাস্তবায়ন করা হবে।

 

Check Also

বগুড়ার ২ কেন্দ্রে স্টুডেন্টস ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

বগুড়া সংবাদ :  বগুড়ার ছাত্র কল্যাণে কাজ করে যাওয়া সংগঠন বগুড়া স্টুডেন্টস ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *