বগুড়া সংবাদ : আওয়ামী লীগকে সুবিধাবাদীদের কবল থেকে রক্ষার জন্য কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘কারো কারণে যদি সংগঠনের (আওয়ামী লীগ) ওপর কালো দাগ পড়ে তাহলে সেটিকে কেটে ছেঁটে দিতে হবে। সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করে তাদের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে মুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বগুড়ায় দলটির প্রবীণ নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা এবং মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে প্রবীণ এবং প্রয়াত মিলে মোট ৭৩৬জনকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা জানানো হয়। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এমপি।
পরররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ চলমান কোটা ইস্যু নিয়েও দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের নামে যারা জনগণের ভোগান্তি ঘটনাচ্ছেন সরকার তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বদ্ধ পরিকর। এছাড়া সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী নেতা-কর্মীদেরও দায়িত্ব আছে। দেশে যাতে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে, জীবন-যাত্রায় কেউ যাতে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সেই দিকে নজর রাখার দায়িত্ব সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের রয়েছে। সুতরাং আপনারও এ ব্যাপারে নজর রাখবেন।’পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ অভিযোগ করেন, কোটা আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দেওয়ায় এর মধ্যে রাজনীতি ঢুকে গেছে। তিনি বলেন, বিএনপিসহ যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদেরকে বলবো আপনারা শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করবেন না। শিক্ষার্থীদের বলবো আপনারা রাজনৈতিক কোন অপশক্তির ক্রীনড়ক হবেন না। তিনি আন্দোলনকারীদের ক্লাশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার কোটা বাতিল করেছিল। পরে এ নিয়ে আদালতে রীট হয়। ফলে কোটার বিষয়ে সমধানটি আদালতের মাধ্যমেই হতে হবে। আদালতের বাইরে গিয়ে সরকার কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এরই মধ্যে হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ এসেছে। পুরো বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। আপনারা ক্লাশে ফিরে যান এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’ একই বিষয়ে বক্তৃতাকালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কোটা আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত মাঠে নামলে তাদেরকে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটির নানা অর্জনের কথা তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানেই বাংলাদেশের ইতিহাস। আবার বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই আওয়ামী লীগের ইতিহাস। তিনি বলেন, অনেক নেতা দলের সঙ্গে দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বেঈমানী করেছে। কিন্তু কর্মীরা আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রেখেছে। দলের ভেতরে সুবিধাবাধী তৈরি হয়েছে এবং তাদের কবল থেকে দলকে রক্ষা করার কথা জানিয়ে তিনি কর্মীদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, পর পর চার বার ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকের মধ্যে আলস্য এসেছে। কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। কিছু সুবিধাবাদী ঢুকেছে। আবার কেউ কেউ সুবিধাবাদী হয়ে গেছে। এখান থেকেই দলকে রক্ষা করতে হবে। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছর সরকার পরিচালনার উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে যখন দল ও সংগঠনের ভেতরে পচন ধরেছে তখন ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। সুতরাং কারো কারণে যদি সংগঠনের ওপর কালো দাগ পড়ে তাহলে সেটিকে কেটে ছেঁটে দিতে হবে। আর সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করে তাদের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে মুক্ত করতে হবে। কারণ রাজনীতি একটি ব্রত। রাজনীতি অর্থ-বিত্ত লাভের কোন সোপন নয়।বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বক্তৃতা করেন। উপস্থিত ছিলেন বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা আলম নাননু, বগুড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য খান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী বাঁধন, বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুভাশীষ পোদ্দার লিটন। সঞ্চালনায় ছিলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি।