বগুড়ার সংবাদ:ঘড়িতে সাতটা বাজতে ১০ মিনিট। বগুড়ার শহিদ টিটু মিলনায়তনে সাড়ে সাতটায় শুরু হবে “তাহমহলের টেন্ডার“, মিলনায়তনের বাহিরে বাড়ছে লোকজনের আনাগোনা। বগুড়ার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের মানুষজনের সাথে মিলনায়তে এসেছেন ডাক্তার, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যাংক কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং আপমর সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন একটাই, “তাজমহলের টেন্ডার“! কিভাবে সম্ভব?
গত ০৫ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বগুড়ার শহীদ টিতু মিলনায়তনে বিহঙ্গ আবৃতি পরিষদের আয়োজনে মঞ্চায়িত হলো ঢাকার সংগঠন কণ্ঠশীলনের নাটক “তাজমহলের টেন্ডার“। নাটকটির মূল রচয়িতা ভারতের বিখ্যাত নাট্যকার অজয় শুক্লা এবং নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিকুন্নবী সামাদী। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন দেশবরেণ্য উচ্চারণ ও আবৃত্তি প্রশিক্ষক কন্ঠশীলন অধ্যক্ষ মীর বরকত।
বাদশাহ শাহজাহান তাঁর প্রিয় বেগম মমতাজের স্মৃতি রক্ষার্থে তাজমহল বানানোর ভার দিলেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার গুপ্তাজিকে। ধুরন্ধর গুপ্তাজি ও তার সহকারী সুধীর প্রধান একজন ব্যবসায়ী ভাইয়াজির সাথে হাত মিলিয়ে শাহজাহানকে ভুল বোঝাতে লাগলেন। তারা নানান কৌশলে বাদশাহর চোখে ধুলা দিয়ে তাজমহল বানানোর আগেই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ এবং তা আত্মসাৎ করতে লাগলেন। বিভিন্ন দফতরের কর্তাব্যক্তি, শ্রমিক নেতারা এবং উন্নয়নকর্মীরাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবৈধ সুবিধা ভোগের মাধ্যমে গুপ্তাজির অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করতে থাকে। এসব কারণে বাদশাহর আকাঙ্ক্ষা পূরণে চরম বিঘ্ন ঘটতে শুরু করল এবং তাজমহল নির্মাণে সময়ক্ষেপণ হতে লাগল। সম্রাট হতাশ হতে লাগলেন আর ভাবতে থাকলেন তার স্বপ্ন কি অধরাই থেকে যাবে? অবশেষে গুপ্তা জি কি তাজমহলের টেন্ডার জারি করতে পেরেছিলেন? শেষ পর্যন্ত গুপ্তাজির মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত মানুষদের পরিণতি কী হওয়া উচিত, তা নাটকটিতে রঙ্গব্যঙ্গের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
মূলত স্যাটায়ার ধর্মী বিরতিহীন ১ ঘন্টা ২০ মিনিটের এই নাটকটির পরতে পরতে মানুষ যেমন অনুভব করেছে বেগম মমতাজের প্রতি সম্রাটের প্রেমের গভীরতা, কিংবা উপভোগ করেছে হাস্যরসের দৃশ্য, তেমনি ভাবনায় ডুবে গেছে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যহত হবার দৃশ্যাবলীতে।
এ নাটকে সঙ্গীত পরিকল্পনায় ছিলেন অসীম কুমার নষ্ট, কোরিওগ্রাফি ও ডিজাইনে আমিনুল আশরাফ ও তাহরিমা প্রিয়াঙ্কা, আলো সজ্জায় ছিলেন অম্লান বিশ্বাস।
নাটকটি মঞ্চায়ন শেষে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বগুড়া সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব রাগেবুল আহসান রিপু। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, নাটকের মাধ্যমে অসঙ্গতি গুলো খুব সহজেই তুলে ধরা যায় এবং সাধারণ মানুষকে বোঝানো যায় বলেই ব্রিটিশরা নাটক প্রচার নিষিদ্ধ করেছিল।
সত্যিই তাজমহলের টেন্ডার নাটক সেই কথাই যেন বলে দিলো। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বগুড়ার সার্কেল এসপি জনাব মতাহার হোসেন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হসেন মিশু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার সহ–সভাপতি জনাব আতিকুর রহমান মিঠু, জেলা কালচারাল অফিসার শাহাদৎ হোসেনসহ প্রমুখ।
বিহঙ্গ আবৃত্তি পরিষদের পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার দাস সুবল সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নাটকের নির্দেশক মীর বরকতকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জনান। মঞ্চায়নের স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেন বগুড়া সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব রাগেবুল আহসান রিপু