
বগুড়া সংবাদ : বগুড়ার করতোয়া নদী দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের অভিযানে টিএমএসএসের স্থাপনা উচ্ছেদের পরদিনই সংবাদ সম্মেলন করে অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী সংস্থা বিসিএল গ্রুপ।বুধবার (৯ এপ্রিল) বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া এলাকায় করতোয়া নদীর দখলকৃত অংশে গড়ে ওঠা টিএমএসএসের গ্লাস ফ্যাক্টরি ও অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী। অভিযানটি পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জেলা প্রশাসন জানায়, তুরাগ নদী রক্ষা আইনের আলোকে দেশের অন্যান্য নদীর মতো করতোয়াকেও দখলমুক্ত করা হচ্ছে।
প্রশাসনের দাবি, টিএমএসএস বহুদিন ধরে নদীর বুক চিরে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে আসছিল। এমনকি ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। এর পরও প্রতিষ্ঠানটি ‘পুন্ড্র ইকোনোমিক জোন’ নামে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কাজ অব্যাহত রাখে। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সেখানে টিএমএসএসের ১১টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, যার পরিমাণ ৯৩ দশমিক ১৫ শতক।
তবে অভিযানের পরদিন বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে টিএমএসএসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিসিএল গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারওয়ার মোহাম্মাদ দাবি করেন, উচ্ছেদ করা অংশ তাদের লিজকৃত জমির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটি টিএমএসএসের নিজস্ব মালিকানাধীন কবলা সম্পত্তি। একতরফা ও বিভ্রান্তিকর জরিপের মাধ্যমে ভুলভাবে এ অংশ নদীর জমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
তিনি আরও জানান, উচ্ছেদ নোটিশের বিরুদ্ধে টিএমএসএস আদালতে মামলা করে এবং এতে প্রাথমিকভাবে নিষেধাজ্ঞা পায়। বর্তমানে বিষয়টি জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা আইন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিসিএলের দাবি, উচ্ছেদ অভিযানে তাদের গ্লাস ফ্যাক্টরির ভেতরের ভারী যন্ত্রপাতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি আমদানিকৃত কনটেইনার, যেগুলো সরানো সম্ভব ছিল, তাও ভেঙে ফেলা হয়। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই ঘটনায় একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, করতোয়া নদীর ৯৩ দশমিক ১৫ শতক জায়গা ভরাটের পর দখল করে বগুড়া সদরের বাঘোপাড়ায় গ্লাস ফ্যাক্টরি গড়ে তোলে টিএমএসএসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিসিএল। এছাড়াও ঠেঙ্গামারা এলাকায় টিএমএসএস অক্সিজেন প্লান্ট, শহীদ মিনার ও ছাত্রাবাস নির্মাণ করে নদীর ১৬ দশমিক ৯৭ একর জায়গা দখল করে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ জানান, আদালতে মামলা থাকলেও তুরাগ নদী রক্ষা আইনের আলোকে দেশের সব নদীর মতো করতোয়াকেও দখলমুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা আইনি লড়াইয়ের পর উচ্ছেদের পদক্ষেপ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে করতোয়ার সব দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।”