বগুড়া সংবাদ:আজ ২ নভেম্বর২৪, শনিবার কৃষক সমিতি বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যেগে শহীদ খোকন পার্কে এক কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষক সমিতি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ পাল এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাাখেন রাকসু’র সাবেক ভিপি কৃষক সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য রাগিব আহসান মুন্না,কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ হোসেন, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী শেখ,সহ-সভাপতি এডভোকেট লুৎফর রহমান, হুমায়ুন কবির, ফিরোজ আক্তার পলাশ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক নাদিম মাহমুদ, জেলা কমিটির সদস্য বাদল মৈত্র, বীরেন মাহাতো শাহনেওয়াজ কবির খান পাপ্পু,সোহানুর রহমান সোহান।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা জিন্নাতুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছাব্বির আহম্মেদ রাজ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বগুড়া জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হাফিজ আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, সহ-সাধারণ বীরমুক্তিযোদ্ধা হরি শংকর সাহা, সদস্য নিমাই ঘোষ,ডা: বিভূতি ভূষণ, ক্ষেতমজুর সমিতি বগুড়া জেলার সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সাহা সন্তোস, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, আদিবাসী ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি শ্রীকান্ত মাহাতো।
নেতৃবৃন্দ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে কৃষি – কৃষক ও শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষায় দ্রুত কৃষকদের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ কৃষক – ছাত্র – জনতার গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে সংহত করার জন্য কৃষকসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় আরো শুভেচছা বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়নের, যুব ইউনিয়ন, ক্ষেতমজুর সমিতি, টি ইউ সি,উদীচীর নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন- “দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পটভূমিতে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, আমরা কৃষক সমিতি, কৃষি ও কৃষক স্বার্থের বিরোধী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই দীর্ঘ সময় ধরেই ধারাবাহিক লড়াইয়ে ছিলাম। গণ অভ্যুত্থান পরবর্তীতে বর্তমান অন্তবর্তিকালিন সরকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে গঠিত হয়েছে, তাদের লক্ষ্য একটা বৈষম্য মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন। এই জায়গা থেকেই আজকে আমরা বলতে চাই- কৃষকরা যুগ যুগ ধরেই বৈষম্যর শিকার। স্বাধীন দেশে আজও কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যর শিকার, অথচ এই ভূখণ্ডের কৃষকের শ্রমে-ঘামে ও রক্তে এই স্বাধীন বাংলাদেশ। দখলদার বৃটিশদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও বিদ্রোহ, উপনিবেশিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, স্বৈরশাসক বিরোধী প্রতিটি লড়াইয়ে কৃষকের রক্ত ঝড়েছে। দুই-দুইবার দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু কৃষকের ভাগ্যের খুব একটা হেরফের হয়নি।
রাষ্ট্রের নীতি কৃষি ও কৃষক স্বার্থের পক্ষে না। ভূমি সংস্কার হয়নি, নদী সিকস্তি অঞ্চলের মানুষের সিকস্তি জমি জেগে উঠলেও আইনের মারপ্যাঁচে কেড়ে নেয়া হচ্ছে। কৃষির জন্য অপরিহার্য কৃষিজমি, নদী-নালা, খাল-বিল ধ্বংস করা হচ্ছে, পাহাড়-বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে, এসবের ফল জলবায়ু পরিবর্তন, পরিনতি আমাদের কৃষি ও কৃষক অস্তিত্বের সংকটে।
কৃষি ভিত্তিক শিল্প-কারখানা হচ্ছে না, আশির দশক থেকেই সরকার গুলোর নীতির কারণেই সরকারি পাটকল, চিনিকল একে একে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিগত স্বৈরাচারী শাসক ২৬টি সরকারী খাতের পাটকল, ৬টি চিনিকল বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা আজকের এই সভা থেকে এসব কারখানা চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
কৃষির জন্য অত্যাবশ্যক সার, বীজ, কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণ এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেড়িয়ে গেলেও আমরা এসব নিজেরা উৎপাদন করে চাহিদা মিটাতে পারি না, প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। কোটি কোটি টাকায় নির্মিত সার কারখানার উৎপাদন ক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে না, কারখানায় গ্যাস না দিয়ে যানবাহনে গ্যাস দেয়া হচ্ছে। কারখানা অচল, কর্মসংস্থান নেই, বিদেশ থেকে বেশি দামে আমদানি করা হচ্ছে। এই সুযোগে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও লুটেরা ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের সার-বীজ-কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি বাজারজাত করছে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর লাভবান হচ্ছে লুটেরা ব্যবসায়ীরা। আমরা এই সরকারের কাছে এর ফয়সালা চাই। বিএডিসিকে সচল করার দাবি জানাই, কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি দেশে উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে আহবান জানাচ্ছি। কৃষি ভিত্তিক শিল্প-কারখানা, পর্যাপ্ত সংখ্যক গুদাম ও হিমাগার নির্মাণের দাবি জানাই। একই সাথে কৃষক সমিতির দাবিসমূহ ধাপে ধাপে বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে আহবান জানাচ্ছি। “
অন্যান্য বক্তাগণ কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম,প্রকৃত কৃষকের জন্য কৃষি কার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রয় কেন্দ্র চালু,সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান, আমূল ভূমি সংস্কার সহ অন্যান্য দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে কৃষক সমিতির দাবি সমূহ মেনে নেয়ার জন্য বর্তমান অন্তর্বতিকালিন সরকারের প্রতি আহবান জানান।