
বগুড়া সংবাদ ( মোশাররফ হোসেন,সোনাতলা ): আব্দুল হালিম (৪১) একজন প্রতিবন্ধী। তার জীবন কাটছে অতি কষ্টে। হাত-পা বিকলাঙ্গ অবস্থা। সোনাতলা উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের মৃত হায়দার আলী শেখ ও মাতা মৃত অবেদা বেগমের ছেলে এই আব্দুল হালিম। আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে যখন তার বয়স ২০ বছর,তখন তিনি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ রোগে তার দুই হাতের আঙ্গুল ও পায়ের আঙ্গুলের অগ্রভাগে ঘা হয় ও ক্রমান্বয়ে আঙ্গুলগুলো কুঁকড়ি হতে থাকে। জ্বালা-যন্ত্রণা হতে থাকে আঙ্গুলগুলোতে। এতে ভীষণ কষ্ট পায় আব্দুল হালিম। রোগ শুরুর প্রথমে তিনি চিকিৎসা নেন সোনাতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কুষ্ঠরোগ বিভাগে। এখানে কিছুদিন চিকিৎসা নিয়ে আরোগ্য না হওয়ায় পরবর্তীকালে এ হাসপাতালের কুষ্ট বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকের পরামর্শে চলে যান নীলফামারীর লটখানা হাসপাতালে। হাত-পায়ের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগে ঘা ও সেইসাথে কুঁকড়ি হতে থাকায় সেখানকার চিকিৎসক তার জীবনের ভবিস্যৎ চিন্তা করে ও আঙ্গুলের পরিস্থিতি দেখে ডান হাতের একটি আঙ্গুল ও ডান পায়ের গিড়া পর্যন্ত কেটে দেন। অন্যান্য আঙ্গুলের অবস্থা স্বাভাবিক নয়। সেখানে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নেয়ার ফলে আব্দুল হালিম অনেকটা আরোগ্য হয়ে সেখান থেকে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু অন্যান্য মানুষদের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না তিনি। হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তার প্রতি অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। প্রতিবেশিরা তার চলাফেরার ব্যবস্থার জন্য তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে আবেদন করেন ব্যাটারী চালিত একটি অটোভ্যানের জন্য। আবেদনের প্রেক্ষিতে কিছুদিন পর আব্দুল হালিম একটি অটো ভ্যানগাড়ি পেয়েছেন। তিনি সামান্য টাকা সংগ্রহ করেন। এ টাকায় তিনি বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি থেকে দেশী মুরগী,কিংবা দেশী কাঁচা কলা ও কাঁচা বেল ক্রয় করে তা পেকে ঢাকিতে তুলে ব্যাটারী চালিত অটোভ্যানে নিয়ে গ্রামাঞ্চল,উপজেলা সদরের বিভিন্ন অফিস ও বাসাবাড়ির সামনে গিয়ে হাঁক ছেড়ে এ সব পণ্য বিক্রি করেন। এতে যে টুকু টাকা আয় হয়,তা দিয়ে সংসার চালায়। এ ভাবে কষ্টে জীবন কাটছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোনো মেয়ে তাকে বিয়ে করতে চায় না। তার মা-বাবাও বেঁচে নেই। তাই তিনি নিঃসঙ্গ। নিজের খাবার নিজেকে রান্না করতে হয়। প্রতিনিয়ত রান্না করা তার জন্য বড় কষ্টকর। কষ্ট হলেও উপায় নেই। প্রতিবন্ধী আব্দুল হালিম জানান,মানুষ দয়াবশতঃ একটু ছাড় দিয়ে আমার কাছে মুরগী ও ফল বিক্রি করেন। আমি এসব বিক্রি করে যে টুকু টাকা মুনাফা করি তা দিয়ে আমি সংসার চালাই। আব্দুল হালিম প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে থাকেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান কেউ আমাকে আর্থিক অনুদান দিলে ব্যবসা ভালোভাবে করা যাবে।