বগুড়া সংবাদ: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগ উঠেছে এক সেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ আরো ৩ জনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি গত বুধবার উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভানুরকান্দা গ্রামের একটি চায়ের দোকানে ঘটেছে। এ ঘটনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা বিচার চেয়ে অভিযুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছে।
অভিযুক্তরা হলেন, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ভানুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আব্দুল হাই সাফী এবং অনান্যরা হলেন, সুজন(৩৭), মাহফুজুর রহমান মফিজুল(৩৭) ও বাদশা(৪২)। অভিযুক্ত ৪ জনই উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ভানুরকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় ও থানায় দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে ভানুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি চায়ের দোকানে স্থানীয় কিছু আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে বিভিন্ন কটুক্তি এবং কু-মন্তব্য করতে থাকেন। এসময় সেখানে সামিউল বাছির নামের একজন তাদের কটুক্তি করতে নিষেধ করেন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। পরে বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ছাত্ররা তাকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাইলে তাদেরও বিভিন্ন হুমকি দেয় ওই সেচ্ছাসেকলীগ নেতা। পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক ওই গ্রামে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদকে কটুক্তির বিষয়ে প্রতিবাদ জানান তারা। এঘটনায় কটুক্তির বিচার চেয়ে ছাত্রদের পক্ষ থেকে রাহাদ নামের এক শিক্ষার্থী বাদি হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একইসাথে আব্দুল হাই সাফীর চাকুরী থেকে পদত্যাগ চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ওই ঘটনার পর থেকে তারা গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানান গ্রামবাসী।
বাদী রাহাদ হোসেন নামের ওই ছাত্র বলেন, গোপীনাথপুর ইউনিয়নের সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আব্দুল হাই সাফিসহ আরো কয়েকজন চা স্টলে আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ কোন ছাত্র নয় এবং সে রাজাকার বলে তাকে আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কটুক্তি করেছে। এ কথা শুনে আমরা ছাত্ররা প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টা সে আমাদের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় তার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
নিশাত হোসেন নামের ওই দোকানী বলেন, আমার দোকানে তারা প্রায়ই বসতো। সেদিন তারা শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে বিভিন্ন কু-মন্তব্য করেছে। একজন প্রতিবাদ করলে আব্দুল হাই সাফি এখান থেকে চলে যায়।
এবিষয়ে কথা বলতে আব্দুল হাই সাফি’র বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এসময় তার স্ত্রী লাবনী খাতুন বলেন, আমার স্বামী কখনোই আবু সাঈদকে নিয়ে কটুক্তি করেনি। শত্রæতা মূলকভাবে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে তারা এই মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তারা আমার স্বামীর বিরুদ্ধে গুজব রটাচ্ছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আক্কেলপুরের সমন্বয়ক মাহফুজ আহমেদ শুক্রবার জানান, সেচ্ছাসেবলীগ নেতা সাফি আমাদের শহীদ আবু সাঈদকে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছে। তাকে বিভিন্নভাবে গালি দিয়েছে। এর প্রতিবাদে বিষয়টির কারণ জানতে তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানালে তার নির্দেশনা অনুযায়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। আমরা শহীদের অবমাননা হতে কোনভাবেই হতে দেব না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেনের ভাষ্য, এ বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম শুক্রবার দুপুরে বলেন, ছাত্রদের গণ আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে চা স্টলে সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা বিভিন্ন কটুক্তি করেছে বলে ছাত্ররা আমার কাছে আসে। তাৎক্ষনিক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।