
শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতাঃ চলছে বোরো ধান কাটার মৌসুম, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী অসংখ্য মানুষ। তাদের হাতে কাস্তে, কাঁেধর বাঙ্গ, পরনে লুঙ্গি, কাঁধে গামছা। ছোট ছোট দলবেঁধে প্রান্তিক কৃষকের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছেন তারা। কৃষক আসবে দরদাম ঠিক হবে তারপর ধানকাটতে যাবেন। সূর্য পূর্ব গগনে উদয় হওয়ার সাথে সাথে প্রতিবছর ধানকাটা মৌসুম এলেই শ্রমিকের হাট বসে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খন্দকারপাড়ার (শেরপুর-ধুনট) আলীয়া মাদরাসা গেট সংলগ্ন এলাকায়। সূর্য ওঠার আগে থেকেই অভাবী লোকজন ছুটে এসেছেন হাটে। হাটে একশ্রেণির মানুষ এসেছেন ‘বিক্রি’ হতে, আরেক শ্রেণির মানুষ এসেছেন কিনতে। চলতে থাকে দরদাম, ওঠানামা করে পণ্যের মতোই। স্থানীয় ভাষায় কেউ তাদের বলে কামলা। ভদ্র ভাষায় অনেকে ডাকেন কৃষিশ্রমিক বলে। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত চলে এই শ্রমিকের হাট। কেউ ‘বিক্রি’ হন এক দিন, কেউ পাঁচ দিন, কেউ সাত দিন, কেউ আবার ১০ দিনের জন্য ‘বিক্রি’ হন। দূর থেকে যাঁরা এই হাটে আসেন, তাঁরা বেশি দিনের জন্য, স্থানীয় শ্রমিকেরা প্রতিদিনের জন্য ‘বিক্রি’ হচ্ছেন। বর্তমানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় প্রতিদিন হিসেবে শ্রম বিক্রি হচ্ছে। আবার ধান কাটা থেকে শুরু করে মাড়াই এবং কৃষকের গোলায় তুলে দিয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার চুক্তিতেও শ্রম বিক্রি করছেন। শ্রমিকের হাটে কথা হয় শেরপুরের পানি সারা গ্রামের কৃষি শ্রমিক হাসেম আলী (৪৫), বাবলু (৪০) ছোনকা গ্রামের হানিফ (৫০) বিশ^া গ্রামের (৪৫) সঙ্গে। তারা বলেন, প্রতি বছরই এই সময়ে শেরপুর-ধুনট রোডের আলীয়া মাদরাসা গেটে ধান কাটার জন্য আসেন। এ সময় শ্রমিকের দাম বেশি থাকে। এক মাস কাজ করলে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। কৃষি শ্রমিক কিনতে আসা কুসুম্বি ইউনিয়নের খিকিন্দা গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, আজকালকার শ্রমিকেরা নবাবি স্টাইলে চলেন। ঘড়ি দেখে কাজ করেন। একে তো চাল, ডাল, তেল ও মাছের দাম বেশি; পাশাপাশি একজন কৃষিশ্রমিকের তিন বেলা খাবার দিতে খরচ হয়। শেরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার ২০ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৬৪৩ হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ধানকাটা অব্যাহত রয়েছে।