
বগুড়া সংবাদ : আজ বাংলাদেশের রাজনীতি গভীর সংকটে নিমজ্জিত। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে, ন্যায়বিচার অনুপস্থিত, আর রাষ্ট্র যন্ত্রকে দলীয়করণের মাধ্যমে একদলীয় কর্তৃত্ববাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সংবিধানসম্মত পথ হচ্ছে-জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নির্বাচন আয়োজন করা। এজন্য পি.আর পদ্ধতি চালু করা ছাড়া বিকল্প নেই। আজ ২৩ সেপ্টেম্বার, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় বগুড়ার শহীদ খোকন পার্কে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, শায়েখে চরমোনাই বলেছেন, পি.আর পদ্ধতি এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণের প্রতিটি ভোটের মূল্য আছে। এখানে ছোট-বড় সব দলই ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে আসন পায়। ফলে একটি শক্তিশালী, প্রতিনিধিত্বশীল জাতীয় সংসদ গঠন হয়, যা জাতীয় ঐক্য ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই- রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয়। সংসদীয় ব্যবস্থা শক্তিশালী, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও প্রশাসনকে দলীয়করণ থেকে মুক্ত করতে হবে। জনগণের সম্পদ বিদেশে পাচারকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর বলেন, জুলাই সনদ আমাদের জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার। এটি ছিল রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য জনগণের সঙ্গে করা একটি প্রতিশ্রুতি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটি কার্যকর করা হয়নি। তাই আমরা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর বলেন, আমরা জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আমরা বলতে চাই- এ দেশ কারও বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত না হলে আমরা ঘরে বসে থাকব না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাধ্যমে জনগণের অধিকার আদায় করবো, ইনশাআল্লাহ। মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম অন্তবর্তীকালীন সরকারকে দাবী করে বলেন, সংস্কার, বিচার ও পি.আর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন অবশ্যই আপনাকে দিতে হবে, তাছাড়া আবার বাংলাদেশে নতুন করে ফ্যাসিস্ট ফিরে আসবে।
মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, আমরা কারো আদর্শ বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে চাই না, আমরা আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূলের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা কোনো চেতনায় উদ্বুদ্ধ না হয়ে আসুন আমরা মদিনায় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই। যদি আমরা মদিনায় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারি দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয় জায়গায় শান্তি পাবো ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো বলেন, যদি কেউ বলে আমরা শরিয়া আইন বিশ্বাস করি না, তাদের ব্যাপারে ফতোয়া কি হবে আপনারা জানেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল্লামা আব্দুল হক আজাদ বলেন, আমরা জানি, জুলাই মাসে যে অঙ্গিকার জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়েছিল, তার মূল কথাই ছিলো-একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সেই অঙ্গিকার কেবল কাগজে লেখা কিছু প্রতিশ্রুতি নয়, এটি মানুষের রক্ত ও ঘামে অর্জিত আশার প্রতিফলন। জুলাইয়ের অঙ্গিকার বাস্তবায়ন হলে জনগণ নতুন আশা দেখবে, দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণ কমবে, আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ খুলে যাবে। আর তখনই আমরা বলতে পারি-নির্বাচনের জন্য আর অপেক্ষা নয়। অঙ্গিকার বাস্তবায়ন, সংস্কার ও বিচার নিশ্চিত হলে আগামীকালই নির্বাচন দেওয়া হোক, জনগণ প্রস্তুত। কারণ, জনগণের বিশ্বাস ফেরানো ছাড়া নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব নয়, বরং একটি প্রহসনে পরিণত হবে। আমরা প্রহসনের নির্বাচন চাই না, আমরা চাই প্রকৃত নির্বাচন, যেখানে মানুষ তার ভোটের মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। ভাই আজকের এই দৃঢ় আহ্বান-অঙ্গিকার পূর্ণ হোক, সংস্কার নিশ্চিত হোক, বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক, আর তারপরই আমরা নির্বাচন চাই, চাই আগামীকালই।
জেলা সভাপতি, আ.ন.ম মামুনুর রশীদের সভাপতিত্ত্বে এবং জেলা সেক্রেটারী, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম শফিকের সঞ্চালনায় আজকের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরো বক্তব্য দেন আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, বগুড়া জেলার সভাপতি-মাওলানা আব্দুল মতিন, সহ-সভাপতি-অধ্যাপক মীর মাহমুদুর রহমান চুন্নু, জয়েন্ট সেক্রেটারী- অধ্যাপক মুফতী এমদাদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক জিয়াউর রহমান জিয়া, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ, বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি-মুহ-াম্মাদ সোহরাব হোসেন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন এর সভাপতি-ফরহাদ হোসেন মন্টু, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এর সভাপতি ছাত্র নেতা নাঈম হাসান প্রমুখ।