
বগুড়া সংবাদ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বগুড়ার বিপ্লবী ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে গঠিত অরাজনৈতিক, সেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েস অব জুলাই বগুড়ার উদ্যোগে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে “জুলাই গণঅভ্যুথান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি” শীর্ষক আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং “অভ্যুত্থানের দিনগুলি” প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আজ শনিবার সকাল ১০ টায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বগুড়ার আহত যোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
পবিত্র কুরআন ও গীতা পাঠ এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
ভয়েস অব জুলাই বগুড়ার আহ্বায়ক আজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ওহাব রিয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আলোচনা করেন, জুলাই অভ্যুত্থানে বগুড়ার শহিদ মুনিরুল ইসলামের পিতা মোঃ শামসুল হক, শহিদ সৈকতের পিতা নজরুল ইসলাম, শহিদ রাতুলের পিতা মোঃ জিয়াউর রহমান, ভয়েস অব জুলাই বগুড়ার সদস্য সচিব নাজমুল হাসান নেহাল, বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাবিবুর রশিদ সন্ধান, ছাত্র অধিকার পরিষদ বগুড়ার সভাপতি মিজানুর রহমান পলাশ, আরডিএ বগুড়ার যুগ্ম পরিচালক কৃষিবিদ ড. আব্দুল মজিদ, এনসিপি বগুড়া জেলা সংগঠক শওকত ইমরান, মোঃ মোস্তাফিজার রহমান প্রমুখ।
জুলাই অভ্যুত্থানের দিনগুলির স্মৃতিচারণ করেন আহত জুলাইযোদ্ধা, বগুড়ার ১১ জন শহিদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বদানকারী ছাত্র জনতা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, “২০২৪ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের অবসান ঘটলেও এদেশের মানুষ শোষণ, বঞ্চনা, দুর্নীতি, লুটপাট ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ দৈনন্দিন জীবনের বহুমুখী সঙ্কট থেকে মুক্তি পায়নি। ‘বৈষম্যবিরোধী’ ব্যানারে আন্দোলনের সূচনা হলেও সরকার পতনের পর নতুন প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজকে বৈষম্যহীন করার ন্যূনতম পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। অভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু হয়নি, শহিদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত সম্পন্ন হয়নি। এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মানুষের মৌলিক অধিকার, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, সুশাসন এবং ন্যায্য সমাজ গড়ার প্রত্যাশা যেগুলো এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। অপরদিকে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জুলাইয়ের চেতনা রক্ষা, শিক্ষার্থী ও জনগণের ন্যায্য অধিকার রক্ষা, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণের লক্ষ্যে কাজ করছে ভয়েস অব জুলাই বগুড়া। আমরা বিশ্বাস করি, বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তরুণদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা অপরিহার্য। বগুড়ার শিক্ষার্থী ও যুব সমাজকে সংগঠিত করে সকল বৈষম্য, অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াকু ভূমিকা পালনে কাজ করছে ভয়েস অব জুলাই।”
আলোচনা সভা শেষে নেতৃবৃন্দ বগুড়ার শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত ছবি ও ভিডিও নিয়ে আয়োজিত “অভ্যুত্থানের দিনগুলি” প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
উক্ত অনুষ্ঠান হতে, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা, নিহত ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, ‘মব’ সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা- দখলদারিত্ব-চাঁদাবাজি রোধ করে জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা, খেলাপি ঋণ আদায়, দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ এবং দলীয়করণ ও বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করার দাবি জানান বক্তারা।
আলোচনার শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানের সকল শহিদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে একটি বর্ণাঢ্য রালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।