
বগুড়া সংবাদ : বগুড়ার সোনাতলায় হাজী হাছান আলী আকন্দ ৭টি মহিষ থেকে এখন ৭৫টি মহিষের মালিক। তিনি একজন সফল মহিষ খামারি। সফল উদ্যোক্তা। মহিষের খামারের মাধ্যমে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার মহিষের দুধ বিক্রি হয় বিভিন্ন এলাকায়। তিনি মানুষের দুধের চাহিদা পূরণ করছেন। হাজী হাছান আলীর আকন্দের স্বপ্ন ছিল মহিষ পালনের মাধ্যমে অস্বচ্ছল সংসার স্বচ্ছলে পরিণত করবো। তাই তিনি ২৫ বছর আগে ৭টি বাচ্চা মহিষ কিনে খামারের যাত্রা শুরু করেন। তখন তার আদি বাড়ি ছিল বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার শিমুলতাইড় যমুনার চরাঞ্চলে। সেখানে বাচ্চা মহিষগুলো যতœসহকারে পালন করতে থাকেন। ক্রমান্বয়ে তা বড় হতে থাকে। ৭টির মধ্যে ৫টি ছিল মাদী মহিষ। ৫টি মাদী মহিষ বড় হলে তা থেকে জন্ম হয় ৫টি বাচ্চা মহিষ। খুলে গেল তার কপাল। ৫টি মহিষ থেকে দৈনিক দুধ হচ্ছিল প্রায় ৫০ লিটার। এ থেকে দৈনিক নিজেরা কিছু খাচ্ছিলেন। আর অবশিষ্ট দুধ বিক্রি করতেন। তার অদম্য পরিচর্যায় খামারে প্রতি বছর মহিষের সংখ্যা বেড়ে এখন তার ৭৫টি মহিষ। তার স্বপ্ন পরিণত হলো সত্যে। ৭৫টির মধ্যে বর্তমানে দুধ দিচ্ছে ২৮টি মহিষ। এ থেকে দৈনিক দুধ হয় ২২৪ লিটার। ব্র্যাকের চিলিং সেন্টার কিংবা পাইকারী ক্রেতারা প্রতি লিটার দুধ কেনেন ৫৫-৬০ টাকা দরে। এভাবে প্রতি বছরে দুধ বিক্রি করেন ৪৯ লাখ ৫ হাজার টাকার অধিক। টাকার প্রয়োজন হলে ২-৪টি বাচ্চা মহিষ বিক্রি করেন। মহিষগুলো পালনের জন্য কর্মচারী বা রাখাল রয়েছে ৩ জন। তাদের খাবারের জন্য প্রতি বছরে ব্যয় হয় ৩৬ হাজার টাকা। বছরে কাপড়-চোপড় বাবদ ব্যয় হয় ১০ হাজার টাকা। তিনজনের মাসিক বেতন ৪৫ হাজার টাকা হিসেবে বছরে বেতন দিতে হয় পাঁচলাখ ৪০ হাজার টাকা। দুই ঈদে বোনাস দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। মহিষগুলোর খাবার বাবদ প্রতি বছরে ব্যয় হয় একলাখ টাকার মতো। চারণভূমি বর্গা নেয়া বাবদ ব্যয় হয় ১০ লাখ টাকা। প্রতি বছরে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয় একলাখ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদে ট্যাক্স দিতে হয় বছরে ১৩০ টাকা। তিনি চার ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। এতে তার বছরে ব্যয় হয় ১৮ লাখ ১৭ হাজারের অধিক টাকা। তারপরও বছরে আয় থাকে ১৩ লক্ষাধিক টাকা। তিনি মহিষগুলো নিয়ে ১৯ বছর পূর্বে চলে আসেন বগুড়ার সোনাতলায়। এখানে এসে ছেলেদের জন্য গড়ফতেপুর,সাহবাজপুর ও সুজাইতপুর গ্রামে জায়গা কিনে বাড়ি করে দিয়েছেন। বন্যার সময় মহিষগুলো নিয়ে আসেন সোনাতলা সদরে। ফাঁকা উঁচু জমিতে মহিষগুলো বেঁধে রাখেন ও ছেড়ে দিয়ে ঘাস খাওয়ায়। পানি কমে গেলে মহিষগুলো নিয়ে যায় সোনাতলা,সাঘাটা,ফুলছড়ি,সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলে। যখন মহিষগুলো একসাথে চলাফেরা করে কিংবা শুয়ে থাকে তখন দেখতে খুব সুন্দর লাগে। মহিষগুলো যেখানেই রাখা হয়, তার পাশেই রাখালদেরকে ছোট ছইঘরে কষ্টের মধ্যে দিন কাটতে হয়। কতক এলাকায় দুষ্কৃতিকারীরা রাখালদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবী করে। টাকা না পেলে ২-১টি মহিষ জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে রাখালদেরকে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। মহিষ খামারি হাজী হাছান আলী আকন্দ ও তার রাখাল কর্মচারীরা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চায়। খামারি হাছান আলী আকন্দ মনে করেন মহিষ পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। মহিষ পালনের মাধ্যমে নিজেরা নিয়মিত দুখ খেতে পারি,আবার অন্যদের দুধের চাহিদা পূরণ করতে পারি। একটি বাচ্চা মহিষ লালন-পালন করে বড় করলে তা অধিক টাকায় বিক্রি করা যায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজ পর্যন্ত মহিষ পালনের জন্য সরকার কিংবা বেসরকারি সংস্থা থেকে লোন কিংবা সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। এমননি বিনামূল্যে মহিষের খাদ্য পাইনি। সরকার কিংবা বেসরকারি সংস্থা মহিষ পালনের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করলে আমার খামারে মহিষের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করবো। আমার দেখে ২-৪ মানুষ আগ্রহী হয়েছেন। আবার কেউ আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। এজন্য আমি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। সোনাতলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুসরাত জাহান লাকী জানান,মহিষ পালন লাভজনক ব্যবসা। এ প্রাণির রোগ বালাই কম। মহিষকে প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি দানাদার খাবার দিলে আরো ভাল হয়। হাছান আলী আকন্দ মাঝে-মধ্যে আমাদের প্রাণিসম্পদ অফিসে পরামর্শ নিতে আসেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তিনি পরামর্শ মোতাবেক কাজ করেন। এতে তিনি উপকৃত হচ্ছেন। তিনি আরো জানান, খামারিদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও নানা প্রকার ওষুধ দেয়া হয়।