বগুড়ায় ভুয়া ডিবি পুলিশ গ্রেফতার

বগুড়া সংবাদ : বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক দুটি অভিযানে ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারী দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো দুপচাঁচিয়া চৌধুরীপাড়ার মৃত সাইফুলের ছেলে শামীম আহম্মেদ (৪৬) এবং শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার হাবিবের ছেলে তাফসির (২৮) শনিবার ভোরে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বগুড়া শহরের গোদারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের নিকট থেকে পুলিশের ওয়াকিটকি সাদৃশ্য মোবাইল ফোন, ইলেক্ট্রনিক শক মেশিন জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানায়, মারুফ ইসলাম নামের জনৈক ব্যক্তি শনিবার বগুড়া ডিবি অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যে, বগুড়া সদর থানাধীন গোদারপাড়া বাজারস্থ “শেরপুর চাউল ঘর”প্রোপাঃ মোঃ জুবায়ের আহমেদ এর বিকাশের দোকানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে লেনদেন করে আসছিলেন। লেনদেনের এক পর্যায়ে উক্ত দোকানদার মারুফের কাছে ছিয়াশি হাজার পাঁচশত টাকা পাওনা ছিল। গত ২১/০৬/২০২৫ খ্রি. সকাল অনুমান ১০ ঘটিকার সময় অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর-০১৮৭৪-৫৩** হতে মারুফকে বগুড়া ডিবি পুলিশের প্রধান শামীম পরিচয়ে ফোন করে বগুড়া সদর থানার চারমাথা ফিলিং স্টেশনের সামনে যেতে বললে মারুফ সরল বিশ্বাসে উল্লেখিত স্থানে উপস্থিত হন। আসামী শামীম মারুফকে বলে জুবায়েরের বিকাশের দোকানের বাকি টাকা এখনই পরিশোধ করে দিতে হবে। মারুফ দুইদিন পরে কিছু টাকা পরিশোধ করবে বললে শামীম মারুফের নিকট হতে মোটরসাইকেলে ১ হাজার টাকার তেল উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে গত ২৩/০৬/২০২৫ দুপুর অনুমান সাড়ে ৩টার দিকে মারুফ চারমাথাস্থ মেঘসিটি কমপ্লেক্স ভবন এর নিচতলায় তার অফিসে অবস্থান করাকালীন ভূয়া বগুড়া ডিবি প্রধান পরিচয়ধারী প্রতারক আসামী শামীম  তাকে ফোন করে চারমাথা ফিলিং স্টেশন এর সামনে যেতে বলে।
মারুফ সেখানে গেলে তার নিকট হতে বিকাশের দোকানের পাওনা ৭৭ হাজার টাকা দাবি করে। মারুফ উক্ত টাকা তাকে না দিয়ে বিকাশের দোকানদারকে দেওয়ার কথা বললে প্রতারক শামীম তার নিকটে থাকা ওয়াকিটকি দেখিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং প্রাণ নাশের হুমকিসহ মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক মারুফের পকেটে থাকা সর্বমোট ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার মামলা নং-২৬, তারিখ-০৬/০৭/২০২৫, ধারা-১৭০/১৭১/৩৮৪/৪১৯ পেনাল কোড, ১৮৬০; রুজু হয়।
উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে বগুড়া ডিবির একটি চৌকস দল নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে চারমাথা গোদারপাড়া এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ভূয়া ডিবি অফিসার পরিচয়ে প্রতারনাকারী শামীম আহম্মেদ (৪৬) কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকালে শামীমের হেফাজত হতে ১টি ওয়াকিটকি সাদৃশ্য মোবাইল ফোন, ১টি বক্সিং রিং, ১টি বৈদুতিক হ্যান্ড শর্ট মেশিন, ১টি ড্রাইভিং লাইসেন্স, ১টি অস্থায়ী সোর্স নিয়োগের আবেদনপত্র ও ১টি ডাঃ মোঃ শামীম আহম্মেদ লেখা ভিজিটিং কার্ড উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামীম জানায় যে, সে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেকে ভূয়া ডিবি অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনের নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে আসছিল। প্রতারক শামীমকে উল্লেখিত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ্দ করা হয়েছে।
অপর দিকে, মোঃ মেহেদী হাসান সাওন রোববার ডিবি অফিসে মোখিক অভিযোগ  করেন যে, গত ০৫/০৭/২০২৫ খ্রি. বেলা অনুমান ১২ঘটিকার সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মোবাইল নম্বর ০১৬১২-৩০** হতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৭০৮-৩৮***তে ফোন করে নিজেকে বগুড়া ডিবির অফিসার রেজা পরিচয় দিয়ে বলে তার নামে ৭/৮ টি মামলা আছে সে তাকে গ্রেফতার করার জন্য খুঁজতেছে। তার সাথে দেখা করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না দিলে সে বাদীকে গ্রেফতার করবে। এরপর বিভিন্ন সময়ে মোবাইল নম্বর ০১৬১২-৩০* এবং ০১৩৩৮-৫২** হতে বাদীকে ফোন করে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। উক্ত টাকা না দিলে তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।
একপর্যায়ে বাদী ভীত হয়ে টাকা দিতে রাজি হলে তাকে আসামীগণ বিকাশ/নগদ একাউন্ট সম্বলিত মোবাইল নম্বর ০১৭৩১-৪৯** (পারসোনাল) প্রদান করে। বাদী বিকাশ একাউন্টে টাকা না দিয়ে সরাসরি টাকা দিতে চাইলে তাকে টাকা নিয়ে শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া, উটের মোড় সংলগ্ন ঈদগাহ্ মাঠের সামনে পাকা রাস্তার উপর যেতে বলে। বাদী তাৎক্ষণিক বিষয়টি ডিবি বগুড়া’র অফিসার ইনচার্জের নিকট মৌখিক ভাবে জানালে তাৎক্ষণিক ডিবি বগুড়া’র অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে ডিউটিতে টহলরত ডিবির একটি টিম ঘটনাস্থলে হাজির হয়।
রোববার ভোর অনুমান ৪.৩০ ঘটিকার সময় বাদী টাকা নিয়ে উক্ত স্থানে গেলে ১নং আসামী মোঃ তাফসির (২৮) টাকা নিতে আসা মাত্র ডিবির সদস্যরা তাকে ধরে ফেলে। এসময় সেখান থেকে ৪/৫ জন কৌশলে পালিয়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তাফসির জানায়, সে এবং পলাতক আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবত নিজেদের পরিচয় গোপন করে বগুড়া ডিবির অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনকে মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলো।
উক্ত ঘটনায় বাদী সদর থানায় মামলা দায়ের করলে গ্রেফতার আসামিকে উক্ত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।