বগুড়া সংবাদ,:বগুড়ার শাজাহানপুরে যুবদল নেতা ফোরকান আলী হত্যা মামলায় আদালতের নির্দেশে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করতে এসে স্বজনদের অনুরোধে ফিরে গেলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদমান আকিফ।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ঘাসিড়া সুফিপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থান থেকে নিহত ফোরকান আলীর মরদেহ উত্তোলন করতে আসেন তিনি। এসময় শাজাহানপুর থানার ওসি ওয়াদুদ আলম, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাসুদ করিম ফোর্স সহ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদমান আকিফ জানান, আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করতে আসার পর স্বজনরা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানাবেন এবং আদালতে মৃত্যুর সঠিক কারণ অবহিত করবেন মর্মে সময় আবেদন করেন। এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের সময় আবেদন আমলে নেয়া হয়েছে। পরবর্তিতে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর সকালে শাজাহানপুরের সাজাপুর মাটির মসজিদ এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে বিএনপির ডাকা অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই সময় র্যাব ও পুলিশের টহল দল দেখে বিক্ষোভকারীরা দিকবিদিক ছুটে পালিয়ে যায়। এসময় মিছিলে থাকা উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ঘাসিড়া সুফিপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ফোরকান আলী মটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সেসময় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের গত অক্টোবর মাসে খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ইউনুস আলী বাদি হয়ে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (শাজাহানপুর) আমলি আদালতে হত্যা মামলা দায়েরের আবেদন করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত ১ নভেম্বর শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এজাহার নামীয় ১৬০ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফোরকানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
মামলা দায়েরের পর মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে মর্মে মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিতের জন্য গত ৫ নভেম্বর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেন নিহত ফোরকান আলীর বাবা আবদুল কুদ্দুস। সেই সাথে এই হত্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করারও প্রস্তুতি নেন তিনি।
আবেদনে আবদুল কুদ্দুস উল্লেখ করেন, তিনি বা তার পরিবারের কেউ এই হত্যা মামলা করেননি। অন্য কেউ একজন মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় ফোরকানকে গুলি করে হত্যার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেসময় গুলির কোন ঘটনা ঘটেনি। ফোরকান পুলিশ দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পালাতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই মৃত্যুতে কারও প্রতি কোন অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই ফোরকানকে দাফন করা হয়েছে। অথচ পরিবারকে না জানিয়ে জনৈক ইউনুস আলী অসৎ উদ্দেশ্যে এই হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি আরও জানান, তিনি আদালতে গিয়েছিলেন। আদালত ফোরকান যে হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেছেন তার কাগজপত্র চেয়েছেন। সেসব কাগজপত্র গুছিয়ে আদালতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।