

বগুড়া সংবাদ : মো. আব্দুল মতিন কাহালু (বগুড়া) থেকেঃ ‘‘তালের আঁশে তৈরি জিনিস বিক্রি করে ১১ হাজার টাকায় চার আনা ওজনের সোনার চুড়ি বানিয়েছি, রান্নার কষ্ট কমাতে ৫ হাজার টাকা দিয়ে গ্যাসের চুলা কিনেছি। এ কাজ করে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাতে স্বামীকে সহযোগিতা করি।” বেশ গর্বের সঙ্গেই কথাগুলো বলছিলেন বৃষ্টি বিবি।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাঁচকুপি গ্রামের সামছুদ্দোহার স্ত্রী বৃষ্টি বিবি গত ১৫ বছর ধরেই এ কাজ করছেন। গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি এ কাজ করে দিনে আয় করেন গড়ে ২০০ টাকা। আর একই গ্রামের সাবিনা খাতুন (৩৩) বিয়ের আগে থেকেই এ কাজ করছেন। গত ২৫ বছর ধরে প্রবাসী স্বামী আবু তালেবের সংসার সাবিনা তার রোজগারে আগলে রেখেছেন। মালয়েশিয়ায় থাকা তালেবের রোজগারের সঙ্গে তার আয় যোগ করে মেয়ের পড়ালেখা আর অন্যান্য খরচ চালাচ্ছেন তিনি।
“এখন তো আমি আমার শখ পূরণ করি নিজের রোজগারের টাকায়” বললেন সাবিনা খাতুন। তারও আয় বৃষ্টির মতোই দিনে গড়ে ২০০ টাকা।
সাবিনা আর বৃষ্টির মতোই পাঁচকুপি গ্রামে ছোট বেলা থেকেই তালের আঁশ দিয়ে টুপি, টেবিল ম্যাট, ঝুড়িসহ নানা ধরনের খেলনা বানাচ্ছেন সালমা খাতুন, সাজেদা বিবি, নিলুফা বেগম, লাভলী বেগম ও মিনারা বেগম।
‘‘আগে আমাদের কাজের দাম এতো ছিল না। পণ্যের আকারের ওপর ভিত্তি করে কখনো ৩০ আবার কখনো ৫০ টাকা পেতাম, কিন্তু আমাদের তৈরিকৃত পণ্য বিদেশে যাওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে মজুরি বেড়েছে” বললেন সালমা খাতুন।
চারিদিকে বিক্ষিপ্তভাবে লাগানো তালগাছে ঘেরা পাঁচকুপি গ্রাম। এখন এ গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের সবাই তৈরি করেন পরিবেশবান্ধব নানা ধরনের সামগ্রি। যার চাহিদা রয়েছে দেশেও।
বগুড়া ভিত্তিক ছোট একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (পিইউপি) ওই গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি তালের আঁশের সামগ্রী প্রথম ২০০৫ সালে ডেনমার্কে রপ্তানি করে, পরে যায় ইতালিতে। পিইউপি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করলেও বছরে এখন সংস্থাটি রপ্তানি করেছে প্রায় ১০ লাখ টাকার সামগ্রী।
পিইউপির প্রধান সমন্বয়কারী শেখ মো. আবু হাসানাত সাইদ বলেন, ডেনমার্ক, ইতালি, জাপান ছাড়াও অনেক দেশেই বাংলাদেশে তৈরি তালের আঁশের সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘‘পরিবেশ বান্ধব বলেই তালের আঁশের পণ্যে আগ্রহ বেশি জাপানের। মধ্যপ্রাচ্যে চাহিদা আছে, দূতাবাস সহযোগিতা করলে ইউরোপ ও আমেরিকাতে ও বাজার ধরা সম্ভব।”
পিইউপি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মাসরুকুন ইসলাম জানান, মানসম্মত পণ্য তৈরিতে নারীদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে আন্তর্জাতিক মেলাগুলোতে আমাদের পণ্য নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে সরকারকে। আর সে সুযোগ পেলে আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারবো, সৃষ্টি করতে পারবো নতুন নুতন বাজার।