বগুড়া সংবাদ : আষাঢ় শেষে শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি নেই। প্রখর রোদে সব শুকিয়ে যাচ্ছে। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় বর্ষায় আমনের আবাদ হয়। তাই আমন চাষ সম্পূর্ণভাবে বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল। এখন বর্ষা চলছে। অথচ বৃষ্টির দেখা নেই। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এই উপজেলার
কৃষকরা। অনেকে গভীর-অগভীর নলক‚প চালু করে খেতে সেচ দিয়ে হাল চাষ শুরু করছেন। এতে এবারের আমন চাষ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টির দেখা মেলে। বৃষ্টির পানি জমিতে বেঁধে রেখে চাষাবাদ করা হতো। চারিদিকে পানি থৈ থৈ করতো। নদী-নালা, খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি দেখা যেত। এসব পানি দিয়ে জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হতো। আবার কখনো লাগানোর কিছুদিনের মধ্যে ফসল ডুবে যেত। কিন্তু এ বছর আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির দেখা নাই। কাঠফাটা তপ্ত রোদে ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির দিকে চেয়ে আছে মানুষসহ প্রাণীকুল। লাগানো জমিতে ধান বাঁচাতে গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে। নন্দীগ্রাম উপজেলার ইউসুবপুর গ্রামের মাঠে রোববার গিয়ে দেখা যায়, তীব্র রোদে আমনের ক্ষেতগুলো চৌচির হয়ে গেছে। বেশ কিছু মাঠে কৃষকেরা আমন ধান লাগাতে গভীর-অগভীর নলকূপ চালু করে সেচ দিচ্ছেন। ওই গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে আমনের আবাদ করা হয়। এতে খরচ কম হয়। কিন্তু এবার খরায় জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, বৃষ্টির দেখা মিলছে না। এভাবে চলতে থাকলে বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ হবে। এতে করে ধানের উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, তা বুঝতে পারছেন না তিনি। উপজেলার কাথম, রিধইল, বিজয়ঘাট, চাকলমা, তেঘরি এলাকার অনেক
কৃষকরা জানান, সাধারণত আমনের জমি প্রস্ততের জন্য বিঘাব্যতি ব্যয় হয় চার হাজার টাকা। কিন্তু এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় অতিরিক্ত এক হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আমন ধান চাষে সেচের দরকার হয় না। বৃষ্টির পানিতেই আমন চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু এবার বিঘাপ্রতি সেচের জন্য অতিরিক্ত এক হাজার টাকা খরচ হবে। কাথম গ্রামের কৃষক ফেরদৌস সরদার মাঠের শুকনো জমিতে হাল চাষ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বর্ষা চলে যাচ্ছে, বৃষ্টির দেকা নাই। শুকনা জমি ঘাসে ভরে যাচ্চে। বসে থ্যাকে আর কী করমু! শুকনা জমিতই হাল চাষ দিচ্চি।’ বিজয়ঘাট গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘শাওন (শ্রাবণ)
মাসের ১৩ দিন চলে যাচ্চে। বর্ষার দেকা নাই। জমি তো আর খালি ফেলে রাখা যাচ্চে না। তাই শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে আমন লাগাবার
জমি তৈরি করিচ্চি।’ উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, উদ্বেগের কিছু নেই। শ্রাবণের শেষ ভাগে বৃষ্টি হলেও চাষাবাদ ব্যাহত হবে না। এই উপজেলায় ১৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় তিন হাজার ৫০০ গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে।
এবিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজিউল হক জানান, খরার কবলে পড়ে আমন চাষাবাদ ব্যাহত হতে চলেছে। তবে বৃষ্টি না হওয়ায়
কৃষকদের বাড়তি সেচ দিয়ে আমনের আবাদ করতে হচ্ছে। এতে আমন আবাদে লাভ এবার কম হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।
Check Also
১৩ ডিসেম্বর বগুড়ার কাহালু থানা হানাদার মুক্ত দিবস
বগুড়া সংবাদ : বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভম ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের …