
বগুড়া সংবাদ (রশিদুর রহমান রানা, শিবগঞ্জ :বগুড়া) :বগুড়ার শস্য ভান্ডার খ্যাত শিবগঞ্জ উপজেলায় কৃষি উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে রাসায়নিক বালাইনাশক। তবে এসব বিষাক্ত রাসায়নিক শুধু পোকামাকড় ধ্বংসই করছে না, বরং মানবদেহ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য তৈরি করছে ভয়াবহ ঝুঁকি। ফলন রক্ষার নামে ধ্বংস হচ্ছে উপকারী পোকামাকড়, মাছ ও পাখি। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে রাসায়নিকের পরিবর্তে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে। বাজারে সহজলভ্য করা হচ্ছে জৈব বালাইনাশক, সংগ্রহ করা হচ্ছে বালাইনাশকের খালি বোতল, এজন্য ইউনিয়নের বিভিন্ন বন্দরে বন্দরে
দোকানে তৈরি করা হচ্ছে আলাদা জৈব বালাইনাশক কর্ণার। পাশাপাশি সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (IPM) পদ্ধতি অনুসরণে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। স্থানীয় সূত্র জানায়, অনেক কৃষক জমিতে ও আশপাশের খাল-বিলে খালি বোতল ফেলে দেন। এতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মাটি ও পানিতে মিশে যায়। শিশু-কিশোররা খেলতে গিয়ে এসব বোতল হাতে নিলে বা কেউ অসচেতনভাবে ব্যবহার করলে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
স্থানীয় বিহার ইউনিয়নের সংসারদিঘী গ্রামের কৃষক মো: শরিফুল ইসলাম, মো: সিদ্দিক এবং মুত্তালিব হোসেনসহ অনেক কৃষক বলেন, “কৃষি অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা রাসায়নিক বালাইনাশকের পাশাপাশি জৈব বালাইনাশকও ব্যবহার করছি। আগে খালি বোতল জমিতেই ফেলে রাখতাম। এখন বুঝি এগুলো মানুষের শরীর ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই এগুলো এখন আলাদাভাবে কৃষি অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক সংরক্ষণ করি এবং ২০কেজি ৩০কেজি হলে হারুন ভাইয়ের কীটনাশকের দোকানে জমা দেই। ফলে আমাদেরকে কেজি প্রতি ৩০ টাকা দেয়। আমরা চাই এই সংগ্রহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকুক।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার, আব্দুল হান্নান, বলেন, “কৃষকদের খালি বোতল ব্যবস্থাপনা নিয়ে সচেতন করার জন্য নিয়মিত প্রচারণা চলছে। উঠান বৈঠক চলছে, মাঠ দিবসে তাদের এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে যার ফলে অনেক কৃষক এখন কীটনাশকের খালি বোতল আলাদা করে সংগ্রহ করছেন এবং সরকারি মূল্যে উপজেলা কৃষি অফিসে জমা দিচ্ছেন যা আমাদের জন্য একটা ভালো দিক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খালি বোতল ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও সাধারণ কৃষকদের একযোগে কাজ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেই পরিবেশ রক্ষা সম্ভব।