সর্বশেষ সংবাদ ::

বগুড়া জেলা জমঈয়তে আহলে হাদিসদের ত্রি বার্ষিক কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন

বগুড়া জেলা জমঈয়তে আহলে হাদিসদের ত্রি বার্ষিক কমিটি গঠনে
ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন

বগুড়া সংবাদ :বগুড়া জেলা জমঈয়তে আহলে হাদিসের ত্রি-বার্ষিক কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ আহলে হাদীসদের একক সংগঠন যা আল্লামা আব্দুল্লাহেল কাফী আল কোরায়শী (রহঃ) ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার মৃত্যুর পরে তার ভ্রাতুষ্পুত্র রাজশাহী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আল্লামা ড. মুহাম্মাদ আব্দুল বারী (রহঃ) সুনাম ও সুখ্যাতির সাথে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে শিরক বিদআতকে উৎখাত করে তাওহীদ ও সুন্নাহ প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন, যা আন্তর্জাাতিক পরিমন্ডলে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কেন্দ্রীয় জমঈয়তের সুযোগ্য ও উদীয়মান সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও গবেষক ফযিলাতুশ শায়েখ ড. আব্দুল্লাহ্ ফারুক হাফিযাহুল্লাহ্ ও ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ্ খান মাদানীর নেতৃত্বে দাওয়াতী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস কালিমা তাইয়্যেবাকে মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে তাওহীদ ও সুন্নাহ্ বাস্তবায়নে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মুসলিমদের আকীদা সংশোধন ও আদর্শ চরিত্র গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। আহলে হাদীস আক্কীদা বিশ্বাস ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যের প্রতি আস্থাশীল ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে এ সংগঠনকে জোরদার করার জন্য বগুড়া জেলা জমঈয়তের কার্য নির্বাহী কমিটি বিগত বছরগুলোতে কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যাপক ভাবে ব্যর্থ হয়। বরং বগুড়া জেলা কমিটি জমঈয়তকে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করে আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট কায়দায় পরিচালনা করেছেন। যদিও সংগঠনটি একটি নির্ভেজাল তাওহীদবাদি দ্বীনি সংগঠন তথাপিও বিগত সময়ে বগুড়া জেলা জমঈয়তে আহলে হাদীসের বর্তমান কিছু লোকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ঐতিহ্যবাহি এই সংগঠনটি জেলার আহলে হাদীস জনগোষ্টির কাছে খুবই সমালোচিত, যা দিনদিন আরো তীব্র আকার ধারণ করছে এবং এ সংগঠন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সুতরাং এহেন পরিস্থিতি থেকে বগুড়াবাসী আহলে হাদীসরা প্রাণের ঐতিহ্যবাহি সংগঠন জমঈয়তকে রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর। আমরা অতিব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদিস কুরআন ও সহীহ-সুন্নাহর আলোকে শিরক্ বিদআত মুক্ত সমাজ গঠনে সমগ্র দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ্। কিন্তু বগুড়া জেলা জমঈয়তে আহলে হাদীস বিগত কমিটি গঠন করার জন্য জমঈয়তে আহলে হাদীসের কাউন্সিলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু ক্যাডার বাহিনী নিয়ে কাউন্সিলের হল রুমের দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক কেন্দ্রীয় জমঈয়তের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন সাহেবের কূটকৌশলে বগুড়া জেলা জমঈয়তের কার্যকরী কমিটি আব্দুল হককে সভাপতি, আ.ন.ম ইয়াহইয়াকে সেক্রেটারী ঘোষণার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত কমিটি গঠন করে যা গঠনতন্ত্রের প্রচলিত আইন পরিপন্থি বলে সকলেই মনে করেন। উল্লেখ্য যে, কেন্দ্রীয় জমঈয়তের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন সাহেব একজন বিতর্কিত ব্যক্তি, যার কারণে সদ্যই তাকে ঢাকার মিরপুর মাদরাসা দারুস সুন্নাহ ও মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কে এই আ.ন.ম ইয়াহইয়া যিনি জোরপূর্বক জেলা জমঈয়তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহঃ কেন্দ্রীয় ও জেলা জমঈয়তের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত
মসজিদে মুবারক ও মাদ্রাসার অডিট করে দেখা যায় ২,৫৯,৭৩১/-(দুই লক্ষ উনষাট হাজার সাতশত একত্রিশ) টাকা আত্মসাৎ করেছেন যা প্রমাণিত। মসজিদের জন্য ক্রয়কৃত ৪টি এসি (মূল্য=৪,৪০,০০০/-(চার লক্ষ চল্লিশ হাজার) টাকা মুসল্লিদের অবহিত না করে নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করছেন। তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে একজন মহিলা ষ্টাফকে ধর্ষন করে জনতা কর্তৃক ধরা খেয়ে তাৎক্ষণিক বিচারে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে ৪(চার) লক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকেন, যা সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়। তিনি বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামে নিজ এলাকার মসজিদ নির্মাণ কাজের অর্থের হিসাব প্রদান করতে ব্যর্থ হয়ে এলাকা থেকে বিতাড়িত হন। তার অশালিন কথা, খারাপ আচরণ ও মসজিদের মুয়াজ্জিনকে মারধরের ঘটনায় আলেম সমাজ ও মুসল্লীগণ তার পিছনে নামাজ পড়তে ঘৃণা বোধ করেন। তার খুত্বা নিয়েও সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। কেন্দ্রীয় জমঈয়ত মেহমানদের সাথে জনসম্মুখে নগর মাদরাসায় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। যার কারণে তৎকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় জমঈয়ত জেলা জমঈয়তের সভাপতি মোঃ আব্দুল হক, সহ-সভাপতি বিলাল বিন নওয়াব, আ.ন.ম ইয়াহইয়া, ইসমাইল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আহম্মাদ আল মুতী (মামুন) এবং সাংগঠনিক সেক্রেটারী এ.কে.এম শাসছুল আলমকে ০১লা মার্চ ২০২০ থেকে জেলা জমঈয়তের সকল দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করেন। তিনি বিগত ৬/৭ বছরের জেলা জমঈয়ত ও মসজিদের আয় ব্যয়ের কোন হিসাব প্রদান করেনি।
বিতাড়িত আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট এর ঘাড়ে ছওয়ার হয়ে তিনি জেলা জমঈয়তের সেক্রেটারী, মসজিদে মুবারকের সেক্রেটারী, উক্ত মসজিদের ও বগুড়া জিলা স্কুল ঈদগাহ মাঠের ইমামতির পদ জোর দখল করে আছেন এবং এই দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখতে তিনি জেলা জমঈয়তের ১০ই আগস্ট ২০২৪ সালে আবার পাতানো কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলে, আলেম সমাজ ও কাউন্সিলরগণ তা রুখে দেয়। এখানে উল্লেখ্য যে, তিনি জমঈয়তের নেতৃত্ব দখল করতে আবারও গঠনতন্ত্র মোতাবেক অধিকাংশ শাখা ও এলাকার কমিটি গঠন না করে নিজের ইচ্ছামত ১০১ জন কাউন্সিলর/ভোটার তালিকা তৈরি করে আগামী ১৮ই জানুয়ারী ২০২৫ তারিখে ঠিক পূর্বের মতই তামাশা ও পাতানো কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠনের অপচেষ্টা করছেন। ত ০৫ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও জনতার গণ অভূত্থানে ফাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এবার শোনা যাচ্ছে তিনি বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন যুবদলের কোন একজন সাবেক সভাপতিকে ব্যবহার করে তার সহায়তায় আওয়ামী দোসর ও রাজনৈতিক একটি বিশেষ দলের কর্মীদের নিয়ে জেলা জমঈয়ত পূর্নগঠন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যা স্পষ্ট জমঈয়তের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অবৈধ। দেশের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান রাজনৈতিক কোন দলের সাথে আমাদের কোন দ্বন্দ নাই, কিন্তু তারা সুকৌশলে ক্ষমতাসীনদের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়, যা একটি নির্ভেজাল তাওহীদি দ্বীনি সংগঠনের জন্য কাম্য নয়। সুতরাং তাদের ষড়যন্ত্রে ও পাতানো ফাঁদে অংশগ্রহণ কেউ নিজেদের আত্মসম্মান নষ্ট করবেন না এটা আমাদের বিনীত অনুরোধ। বরং আমরাও আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করছি।
আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় জমঈয়ত একটি তদন্ত কমিটি করে বগুড়ায় পাঠান। উক্ত তদন্ত কমিটির সদস্যরা সবার সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনা করেন। তারা তাদের পর্যবেক্ষনে স্বীকার করেন জেলা জমঈয়তের শাখা, এলাকা ও ১০১ কাউন্সিলের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন, বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় জমঈয়তকে তারা অবহিত করবেন। কিন্তু কেন্দ্ৰীয় জমঈয়ত কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে আগামী ১৮ই জানুয়ারী ২০২৫ কাউন্সিল করার উদ্যোগ গ্রহণ কিভাবে করেন, যা আমাদের এখনও বোধগম্য নয়। গঠনতন্ত্রের আলোকে জমঈয়তের একনিষ্ট ও দক্ষ কর্মী নিয়ে শাখা ও এলাকা গঠন করতে হবে। শাখা ও এলাকা গঠন করার পূর্বে কোন ভাবেই জেলা কাউন্সিল করা যাবে না। কোন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মীকে এই দ্বীনি তাওহীদি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না । আ.ন.ম ইয়াহইয়ার অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, অনৈতিক ও সেচ্ছাচারিতার কারণে জেলা জমঈয়তের সকল পদ পদবী থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্করের দাবী জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আ.ন.ম ইয়াহইয়াকে জেলা জমঈয়ত কমিটির প্রত্যক্ষ মদদ দাতাদেরও বহিষ্কারের দাবী জানাচ্ছি। জেলা জমঈয়ত ও মসজিদের বিগত ৬/৭ বছরের পূর্ণাঙ্গ হিসাব নিরীক্ষা করে তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি। বগুড়া জেলা জমঈয়তের ১৮ই জানুয়ারী ২০২৫ এর কাউন্সিল বাতিল ও জেলা জমঈয়তের কার্যকরী কমিটি বিলুপ্ত করার জন্য আমরা জোরদাবী জানাচ্ছি। সরাসরি কেন্দ্রীয় জমঈয়তের তত্ত্বাবধানে জমঈয়তের একনিষ্ট কর্মী ও সবার নিকট গ্রহণযোগ্য সদস্যদের নিয়ে কমিটি গঠনের জোর দাবী জানাচ্ছি।”

 

Check Also

আদমদীঘিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন গ্রেপ্তার

বগুড়া সংবাদ:বগুড়ার আদমদীঘিতে বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের মামলায় মোশারফ হোসেন (৫০) নামের এক আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *