সর্বশেষ সংবাদ ::

সোনাতলায় যমুনা নদীর মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ : নদী পারাপারে জনদুর্ভোগ লাঘব

বগুড়া সংবাদ : মোশাররফ হোসেন মজনু: বগুড়ার সোনাতলায় জনগণের অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে যমুনা নদীর মধ্য দিয়ে ভূমি রক্ষা ও পর্যটন বাঁধ নির্মাণ কাজ শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। এতে লাঘব হয়েছে যাতায়াতে জনদুর্ভোগ। এখনও আংশিক কাজ বাকি রয়েছে। সরকারি অর্থ বরাদ্দ পেলে বাকি কাজ সম্পন্ন এবং বাঁধটি টেকসই ও মজবুত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে
সরকারের কাছে সহযোগিতার জন্য এলাকাবাসীর এখন প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে।
সোনাতলা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পূর্ব দিকে তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়নে অবস্থিত যমুনা নদী। বর্ষাকাল ছাড়াও বছরের অধিকাংশ সময়ে এ নদীতে পানি থাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই পাড়ের মানুষদেরকে নৌকা যোগে নদী পারাপার হতে হয়। একবার নৌকা মিছ হলে তো দীর্ঘ সময় মিছ। ফলে শিক্ষার্থী,রুগী,ব্যবসায়ী ও কৃষক-সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যথা সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁিছতে পারে না। মূল্যবান সময় হয়ে যায় অতিবাহিত। বিশেষ করে চরাঞ্চলবাসীর জন্য এটি বড় অসুবিধা। এদিকে বন্যা এলে নদীর দু’পাড়ের ফসল যায় তলিয়ে। পানির ¯্রােতে ভেঙ্গে যায় নদীর দুই কূলের ফসলী জমি ও ঘরবাড়ি। নদী পারাপার হতে গিয়ে বহুবার নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। তার পরও প্রয়োজনের তাগিদে এভাবে নদীর দুই পাড়ের মানুষদেরকে বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে এপাড়-ওপাড় যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু উপায় নেই। নদী পারাপারে দুর্ভোগ লাঘবে গত জানুয়ারি মাসে চুকাই নগর এলাকার এন্তেজার রহমান বেপারী, মোকাররম হোসেন,জামিরুল মেম্বার, ছানাউল ইসলাম ও আলহাজ্ব ছারোয়ার হোসেন-সহ আরো কয়েকজন সচেতন মানুষ যমুনা নদী ও পশ্চিম পাশে শাখা মরা নদীর মধ্য দিয়ে একটি বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তাদের এ মহৎ উদ্যোগকে সমর্থন দেয় এলাকার জনসাধারণ। জনকল্যাণকর এই উদ্যোগ সফল করার জন্য বর্তমান সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামানিকের মাধ্যমে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভূমি রক্ষা ও পর্যটন বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে নেন। এর পর থেকে উদ্যোক্তারা দানশীল ব্যক্তি ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাশ্রমে শুরু করেন বাঁধ নির্মাণ কাজ। মরা নদীর পশ্চিম পাড়ে তিনমাথা মোড়ে শুকরু মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন থেকে পূর্বদিকে সুজালেরপাড়া গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে সাড়ে ৫ হাজার ফুট বাঁধ নির্মাণ করা তাদের লক্ষ্য। এ পর্যন্ত শতকরা ৮০ ভাগ মাটি ফেলার কাজ হয়েছে। অর্থ অভাবে শতকরা ২০ ভাগ মাটি ফেলার কাজ বাকি রয়েছে। তবে কাজ একেবারে বন্ধ নেই। ধীরগতিতে হলেও কাজ চলমান রয়েছে। বাঁধটির উপরের অংশে প্রস্থও যথেষ্ট। মাটি ফেলার কাজ সমাপ্ত হলে বাঁধটি রক্ষা করতে দুইধারে জরুরী ভিত্তিতে ব্লক ও জিওব্যাগ স্থাপন করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে দুইধারে ঘাস ও বিভিন্ন গাছপালা লাগিয়েছে উদ্যোক্তারা। এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁধটি নির্মিত হওয়ায় জনসাধারণ অনায়াসে যেকোনো সময় হেঁটে,সাইকেল, মোটরসাইকেল ভটভটি,অটোভ্যান,ঘোড়ারগাড়ি ও গরুরগাড়ি ইত্যাদি যানবাহন যোগে যাতায়াত করতে পারছে। দীর্ঘ এই বাঁধের মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে বেড়া বিহীন দুটি ঘর। বৃষ্টি এলে কিংবা অতি রোদের তাপে পথচারীরা আশ্রয় নেয় সেখানে। বিশাল এই কাজ দেখে অনেকে আগ্রহ হয়ে একাধিক দানশীল ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে সাধ্যমতো আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। যা বাঁধ নির্মাণ কমিটি কাজে লাগিয়েছেন। নদীর মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বিশাল বাঁধ নির্মাণ বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। দর্শনার্থীরা বাঁধটি দেখে হয়ে ওঠে হতবাক। স্বেচ্ছাশ্রমে মহৎ কাজ দেখে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাঁধটি নির্মাণ করার উদ্দেশ্য হলো বন্যার পানি নবনির্মিত বাঁধে বাধাগ্রস্ত হয়ে এ নদীর পূর্ব পাশের নদী দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে। এতে তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়ন ও পাকুল্লা ইউনিয়নের আংশিক জমি,ঘরবাড়ি নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা ও ফসল রক্ষা পাবে। এছাড়া কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ নবনির্মিত বাঁধের ওপর দিয়ে সহজে এপাড়-ওপাড় যাতায়াত করতে পারবে। এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হবে। বাঁধটির বাকি কাজ সম্পন্ন এবং টেকসই ও মজবুতের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে বাঁধ নির্মাণ কমিটির নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে বগুড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে সহযোগিতা প্রাপ্তির জন্য গিয়েছিলেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি টীম সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেন এবং কমিটির নেতৃবৃন্দকে বাঁধ নির্মাণ কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উদ্যোক্তারা বলেন, তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি মৌজা যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরাঞ্চলের মানুষদের ও নদীর পশ্চিম পাড়ের মানুষদের নদী পারাপার খুব কষ্ট ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে,চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে এবং উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য যথা সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌছা সম্ভব হতো না। অগ্নিকান্ড ব্যাপারে চরাঞ্চলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মিদের তাদের গাড়ি নিয়ে পৌছা মোটেই সম্ভব ছিল না। এ রকম আরো অনেক অসুবিধা ওই এলাকাবাসীর। উদ্যোক্তারা মনে করেন এসব অসুবিধা ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নদীর মধ্য দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। তাই উদ্যোক্তারা বিষয়টি মাথায় রেখে জনগণের কাছ থেকে শুরু করেন অর্থ সংগ্রহ কাজ। জনগণের অর্থ দিয়ে শুরু করেন নদীর মধ্য দিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ। যা দৃশ্যমান। ৮০ ভাগ হওয়ায় নদী পারাপারে বিভিন্ন এলাকার মানুষ সুফল ভোগ করছে। মাটি ফেলার বাকি কাজ রয়েছে মাত্র শতকরা ২০ ভাগ। এমতাবস্থায় বাঁধটির দুই পাশ দিয়ে লাগিয়েছে কিছু কলাগাছ,বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ঘাস। বাঁধটি টেকসই ও মজবুত করতে দ্রুত প্রয়োজন ব্লক ও জিওব্যাগ স্থাপন। সহযোগিতা পাবার জন্য উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে বগুড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বাঁধটি পরিদর্শন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন প্রেরণ করেছি বলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হক জানান। তিনি আরো জানান, অর্থ বরাদ্দ এলে কাজটি অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয়রা জানান, জনগণের টাকায় বিশাল রাস্তা বা বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। আমরা রাতে কিংবা দিনে যেকোনো সময় দুর্গম চরাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামানিক জানান,বাঁধটি নির্মাণ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমি বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ও জেলা প্রশাসককে অবগত করেছি। বাঁধটি টেকসই ও মজবুত হলে একদিকে বহু পরিবারের ভূমি ও বাড়িঘর রক্ষা হবে, অন্যদিকে চরাঞ্চলের মানুষের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি,ব্যবসায় উন্নতি,চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন হবে।

 

Check Also

বগুড়ায় জুলাই শহীদ স্মৃতি জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে শাজাহানপুরের বড় জয়

বগুড়া সংবাদ: জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা বগুড়ার আয়োজনে শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম সংলগ্ন ফুটবল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *