সর্বশেষ সংবাদ ::

নামে প্রথম শ্রেণির সান্তাহার পৌরসভা হলেও বাড়েনি সেবার মান

বগুড়া সংবাদ : নানা সমস্যায় জর্জরিত বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভা। দীর্ঘদীন ধরে পৌর এলাকার কিছু রাস্তা ও ড্রেনের নাজুক অবস্থা, সড়ক বাতি জ্বলে না, নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে পৌরবাসীর। নাগরিকদের অভিযোগ, নামে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও বাড়েনি সেবার মান। তাই রাস্তাঘাট, সড়ক বাতি ও ড্রেনগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি তাঁদের। ফলে পৌরবাসী উপযুক্ত সেবা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলার সান্তাহার পৌরসভা একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পৌরসভাটি বাংলাদেশের একটি “খ” শ্রেণীভুক্ত পৌরসভা থেকে ২০১৭ সালে এটি “ক” শ্রেণীতে উন্নীত হয়। সান্তাহার পৌরসভাটি রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার অন্তর্গত আদমদীঘি উপজেলার পশ্চিম সীমানা এবং নওগাঁ জেলার পূর্ব সীমানা ঘেসে বৃহত্তর সান্তাহার রেলওয়ে জংশন ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা নিয়ে গঠিত। এর আয়তন ১০.৫৪০ বর্গ কিলোমিটার। পৌর মেয়রসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে পৌর পরিষদ গঠন করা হয়। বর্তমানে পৌরসভার জনসংখ্যা ৫৫ হাজার ৮৫০ জন। কিন্তু বর্তমান সরকার  পৌর প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। আর সেই পৌর প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যা।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা। কিছু সড়কের পিচ ঢালাই উঠে গর্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মূল সড়কের পাশে কিছু মাস্টার ড্রেন থাকলেও গ্রামের ভেতরের ড্রেনের নাজুক অবস্থা। কিছু এলাকায় নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। আগের নির্মাণ করা বেশ কিছু ড্রেন ভেঙে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে বর্ষা এলেই ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এদিকে কিছু জায়গায় অস্থায়ী ডাস্টবিন থাকলেও শহরের বেশির ভাগ এলাকায় ডাস্টবিন নেই। পৌর এলাকার ৯ টি ওয়ার্ডে সড়ক বাতি রয়েছে। নিজস্ব ল্যাম্প পোস্ট না থাকায় নেসকো ও পিডিবির বৈদ্যুতিক খুঁটিতে লাগানো হয় সড়ক বাতি। যেখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি নেই, সেখানে সড়ক বাতিও নেই। বর্তমানে ৩০ ভাগ এলাকায় সড়কের বাতি জ্বলে না। অন্যদিকে পৌর শহরে পানি সরবরাহের নাজুক অবস্থা।

পৌর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, নামেই প্রথম শ্রেণি পৌরসভা সান্তাহার আর কাজে মানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়েও নিম্নমানের সেবা। সন্ধ্যা পর সড়কের অধিকাংশ বাতি জ্বলে না। একবার বাতি নষ্ট হলে বহুবার অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। অথচ পৌর মেয়র দায়িত্বে থাকাকালীন আমরা যে কোন অভিযোগের দ্রুত সমস্যার সমাধান পেতাম।

পৌর এলাকার আরেক বাসিন্দা রাকিবুল হাসান আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ১ম শ্রেনীর পৌরসভার হিসেবে নিয়মিত পৌর ট্যাক্স ও রাজস্ব দিয়ে থাকি কিন্তু সেবা পায় ৩য় শ্রেনীর চেয়েও নিম্নমানের। অবিলম্বে আমরা বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবী জানায় প্রশাসকের বদলে আবারও মেয়র পদে জনপ্রতিনিধিদের নিয়োগ দেওয়া হোক।

পৌরসভা সেবা নিতে আসা মাসুদ রানা বলেন, নিয়মিত পৌর প্রশাসক পৌরসভার অফিস না করার কারনে  নাগরিকত্ব কাগজ নিতে এসে ৭ দিন ধরে ঘুরেও কাগজটি পাচ্ছি না। কারন হিসেবে পৌর কতৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন পৌর প্রশাসকের স্বাক্ষর নিতে একটু দেরি হয়? কারন তিনি এক সাথে অনেক দায়িত্ব পালন করেন। আর পৌর সভার সাপ্লাই পানি অবস্থা আরও খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে স্টেশন এলাকায়সহ বিভিন্ন মহল্লায় পানি সাপ্লাই এর নাজুক অবস্থা। একাধিক বার বলেও কোন সমাধান হয়নি। অথচ পৌর মেয়র থাকলে এমন ভোগান্তি পোহাতে হতো না। পৌরসভায় সেবা নিতে আসা যুথি বানু বলেন, আমার মেয়ের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেও দীর্ঘ ৮ মাস  সময় পার হলেও এখন জন্ম নিবন্ধনের কাগজ হাতে পায়নি। পৌরসভায় গেলে প্রতি নিয়ত বলে ১ সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে কিন্তু আদৌ কি জন্ম নিবন্ধনের কাগজ পাবো? পৌর শহরের সিএনজি চালক রাসেল হোসেন বলেন, রাত হলেই অধিকাংশ বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বাতি জ্বালে না। ভুতুড়ে অবস্থা বিরাট করে। আর অন্ধকার থাকার কারনে চুরি ছিনতাই ঘটনা বেশি ঘটছে। তাই তো পৌর শহরের প্রতিটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বাতি জ্বালানোর জোর দাবী জানায়।

এ বিষয়ে সান্তাহার পৌরসভা সহকারী প্রকৌশলী আবু রায়হান মন্ডল পৌরবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, পানি সমস্যা প্রধান কারণ হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে বোরিং পাইপ ওয়াশের সরকারি ভাবে টেন্ডার না হওয়ার কারনে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আর সড়কের বাতিগুলো পর্যায়ক্রমে লাগানো হচ্ছে। আর বাঁকী সমস্যাগুলো সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Check Also

শিবগঞ্জে আদর্শ মানব সেবা সংগঠনের বৃক্ষ বিতরণ ও আলোচনা সভা

বগুড়া সংবাদ : বগুড়ার শিবগঞ্জে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “আদর্শ মানবসেবা সংগঠন” এর উদ্যোগে বৃক্ষ বিতরণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *