
বগুড়া সংবাদ (রশিদুর রহমান রানা,শিবগঞ্জ বগুড়া) : চিকিৎসকসহ নানা সংকটে বগুড়ার শিবগঞ্জে ৫০ শয্যা হাসপাতাল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সেবা প্রত্যাশীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। প্যাথলজি সেবা, গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা প্রায় ৪ লাখ মানুষের একটি বড় অংশ চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশা করেন ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে দীর্ঘদিন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই গুরত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চলছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট। যেকোনো রোগে আক্রান্ত হলে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের ভরসা সরকারি হাসপাতাল। শিবগঞ্জ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ সারি নিত্যদিনের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘ অপেক্ষার পরও সেবা না নিয়েই ফিরে যেতে হয় রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের গড়ে প্রতিদিন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন প্রায় ৬০ জন রোগী, আউটডোরে বিভিন্ন রোগ নিয়ে চিকিৎসা নেন প্রায় ৪০০থেকে ৫০০ জন আর হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এ হাসপাতালে ১০ জন কনসালটেন্ট এর স্থলে আছে মাত্র ৪ জন । পদ শূন্য আছে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক কান গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট ( শিশু) ও
জুনিয়র কনসালটেন্ট ( গাইনি)। যার ফলে ছোটখাটো ও জটিল অপারেশন হাসপাতালে হচ্ছে না। এতে লাভবান হচ্ছে ক্লিনিক ব্যাবসায়ীরা। হাসপাতালে উৎপেতে থাকা কিছু দালাল, কোন রোগী আসলেই ক্লিনিকে এক প্রকার জোর করে নিয়ে যায় তাদের। এতে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসক না থাকায় ও চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিকিৎসা নেওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
উপজেলার ধাওয়াগীর পাগলাপাড় গ্রামের মঞ্জু মিয়া তার মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন চোখের চিকিৎসকের কাছে। বহির্বিভাগে টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এই হাসপাতালে প্রায় ১০ বছর ধরে চোখের চিকিৎসক নেই। হতাশ হয়ে তিনি বেসরকারি ক্লিনিকে যান। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসাসেবা তাঁর পছন্দ হয়নি। হতাশ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান। মঞ্জু মিয়া, ভোরের ডাককে বলেন আমরা নিম্নবিত্ত মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসি ডাক্তার দেখাতে। এসে তাঁদের পাই না। একটি হাসপাতালে ১০ বছর ধরে চোখের চিকিৎসক নেই, এটা কীভাবে সম্ভব। চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুল বাকি বলেন তিনি গত এক দুই সপ্তাহ হলো হাটা চলা ফেরায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে । হাসপাতালে এসে জানতে পারেন হার্ণিয়া হয়েছে। অপারেশন করতে চাইলে কর্তবরত ডাক্তার জানান হাসপাতালে সার্জেরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাই।
হাসাপাতারে এসেছেন পিরব ইউনিয়নের বেলাল হোসেন । তিনি এক সপ্তাহ ধরে কানের ব্যথায় ভুগছেন। হাসপাতালে এসে জানতে পারেন নাক কান ও গলার চিকিৎসক ৭ বছর ধরে নেই। পাশের একটি ক্লিনিকে যান। সেখানে গিয়েও কোনো চিকিৎসক পাননি।
বেলাল ভোরের ডাককে বলেন, ‘আমরা কেমন উপজেলায় বসবাস করছি, সেখানে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। এখানকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এ সংকট দূর করার জন্য কাজ করছেন না। আমাদের মতো গরিব মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?’
এ ব্যাপরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার এ এস এম রুহুল আমিন বলেন আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়াছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এ চিকিৎসক সংকট কেটে উঠে উপজেলাবাসীকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারবো বলে তিনি আশা ব্যাক্ত করেন।