বগুড়া সংবাদ : যাত্রামঞ্চের নামী অভিনেতা, যাত্রা ও নাট্য নির্দেশক, পরিচালক, বগুড়া পদাতিকের উপদেষ্টা, বগুড়া রেলওয়ের সাবেক স্টোরকিপার এম এ জামান আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো আনুমানিক ৭২ বছর। মৃত্যুকালে স্ত্রী, চার কন্যা ও এক পুত্র রেখে গেছেন। জানা যায়, যাত্রা পরিচালক ও অভিনেতা এমএ জামান নওগাঁর আত্রাই থানায় জন্ম হলেও তার স্কুল জীবন কাটে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। তার পিতা মৃত গাজী রহমান। মা, জোবেদা বেওয়া। বর্তমানে থাকতেন বগুড়া শহরের সেইজগাড়ীতে। পার্বতীপুরে ১৯৬৫ সালে ৮ম শ্রেণীতে পড়াকালে স্থানীয় এক নাট্য সংগঠনের একটি নাটকে ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। এরপর কোথাও কোন নাটক হলে তার ডাক পড়তো। পার্বতীপুরসহ দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় নাটক করতে থাকন। কিন্তু নাটকের ছোট্ট গল্পে তার মন স্থির থাকতো না। মঞ্চের প্রেমে স্বপ্নে বিভোড় তরুণ জামান যোগ দেন স্থানীয় একটি
যাত্রা দলে। সুদর্শন চেহারা হওয়ায় যাত্রপালা দলটি তাকে মুল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাও করতে থাকেন। খুব দ্রুতই তার নাম ডাক উত্তরাঞ্চলে ছাপিয়ে যায়। ছুটতে থাকেন বিভিন্ন জেলা উপজেলা ও গ্রাম গঞ্জে। একের পর এক পরিচালনা ও অভিনয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেন। এমন ডাক নামের সাথে পরিচয় হন যাত্রা পালার দিক পাল অমলেন্দু বিশ্বাস এর সাথে। তার পাশে থেকে অর্জন করেন যাত্রা পালার নিখুঁত কিছু দিক নিদের্শনা। দেশব্যপাী শুরু করেন পরিচালনা ও অভিনয়। কাজ করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক নজমুল হুদা, মতিয়ার রহমান পানু, মতিয়ার রহমান এর সাথে। তার শ্রেষ্ঠ যাত্রা পালার মধ্যে রয়েছে, জীবন নদীর তীরে, মা-মাটি মানুষ, মায়ের চোখে জল, সম্রাট শাজাহান, সিরাজ-উদ-দৌলা, টিপু সুলতান, নাচ মহল, কহিনুর, পান্না হীরা চুনি, এ পৃথিবী টাকার গোলাম, স্বামীর চিতা জ্বলছেসহ বেশ কয়েকটি। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি বগুড়ায় ক’জন যাত্রাভিনেতা যাত্রাপ্রিয়কে নিয়ে গড়ে তোলেন বগুড়া পদাতিক। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালে তিনি ছিলেন সদস্য। সর্বশেষ ছিলেন উপদেষ্টা হয়ে। জীবিতকালে তিনি একাধিকবার সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার মৃত্যুতে তার মৃত্যুতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী, শব্দকথন সাহিত্য আসরের সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক এইচ আলিম, বগুড়া পদাতিক এর সভাপতি এডঃ আমির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবর রহমান মানিক, করতোয়া যাত্রা ইউনিটের সাইফুলসহ অন্যান্য অভিনেতা, নান্দনিক নাট্য দলের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান চৌধুরী, বগুড়া ইয়ূথ কয়্যারের সভাপতি লায়ন আতিকুর রহমান মিঠু, অনুশীলন’৯৫ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম, বগুড়া নাট্যদলের সভাপতি মির্জা আহসানুল হক দুলাল, বাঙময় আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দৌলতুজ্জামান দৌলত, বগুড়া আনন্দ কণ্ঠ এর সভাপতি এবিএম জিয়াউল হক বাবলা, বগুড়া থিয়েটার, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, সংশপ্তক থিয়েটারের সভাপতি আব্দুল্লাহেল কাফি তারা, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সুজন, গীতিচর্চা সঙ্গিতালয়ের সভাপতি তাপসী দে, অ আ সাহিত্য সংসদের সভাপতি রবিউল আলম অশ্রু, কাহালুর প্রভাতী থিয়েটারের আব্দুল বাছেদ, বগুড়া শিশু নাট্যদল, বগুড়া ফাল্গুনি থিয়েটারের রুবেল মিয়া, পাঠকপণ্য পাঠশালার সাধারণ সম্পাদক কবি জয়ন্ত দেব, প্রকাশ শৈলীর সাধারণ সম্পাদক লুবনা জাহান, বিহঙ্গ আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি ফজলে রাব্বী, সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার দাস সুবল, নন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক রনজু
ইসলাম, শিশুনাট্যদলের পক্ষে আব্দুল খালেক, সহ জোটভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
বগুড়া পদাতিক এর সাধারণ সম্পাদক মাহবুবর রহমান মানিক জানান, বৃহস্পতিবার বাদ এশা বগুড়া শহরের সেউজগাড়ীস্থ রেলওয়ে কলোনীর জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাইয়ে দাফন করা হবে। তিনি ছিলেন একজন গুণি নাট্য ও যাত্রা পরিচালক। পেয়েছেন একাধিকবার সম্মাননা ও পুরস্কার।