শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা
উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) নৈশ কোচে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের কোচটি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শেরপুর উপজেলা সীমানায় পৌঁছার পর পরই যাত্রীবেশী সশস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে। এরপর তাদের নিকট থেকে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকাসহ অন্যান্য মালামাল লুট নেয় তারা। একপর্যায়ে লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে সশস্ত্র ডাকাত সদস্যরা ওই কোচ থেকে নেমে যাওয়ার সময় চালকের বুদ্ধিমত্তায় অন্যান্য যাত্রীদের সহায়তায় এক ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। তার নাম মির্জা রুবেল আহমেদ ওরফে সুমন (৫০)। সে টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার ঢেলি করোটিয়া গ্রামের মির্জা আব্দুর রহমান বিশা খাঁনের ছেলে। পরে তার নিকট থেকে লুণ্ঠিত চার হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে তার কাছে একটি চাকু, একটি রুটি তৈরীর কাঠের বেলুন পাওয়া যায়।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে দিনাজপুর থেকে নাবিল পরিবহনের একটি এসি কোচ (ঢাকা মেট্রো ব-১২-২৮৬৬) ১৫জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এরমধ্যে যাত্রীবেশে ৫জন ডাকাত সদস্য ওঠেন। রাত অনুমান একটার দিকে কোচটি বগুড়ার বনানী এলাকায় পৌঁছে। এরপর যাত্রীবেশী সশস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে কোচের সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। এরপর ডাকাতদল একই কায়দায় জিম্মি করে দশজন যাত্রী ও গাড়ির চালক ও সুপারভাইজারের কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, অন্যান্য লুটে নেয়। একপর্যায়ে সশস্ত্র ডাকাত সদস্যরা ডাকাতি শেষে শেরপুর উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগাব্রিজ নামক স্থানে কোচ গাড়ি থেকে একে একে নামতে থাকে। এসময় কোচের চালক রফিকুল ইসলাম জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মির্জা রুবেল ওরফে সুমন নামের এক ডাকাত সদস্যকে ঝাপটে ধরে চিৎকার শুরু করেন। পরে কোচের অন্যান্য যাত্রীরাও এসে তার সঙ্গে যোগ দেন। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।
কোচ চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, যাত্রীবেশী প্রত্যেক ডাকাত সদস্যদের সদস্যদের কাছেই স্কুল ব্যাগ ছিল। সবার কাছেই দেশীয় অস্ত্র দেখেছেন তিনি। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজনকে ঝাপটে ধরে চিৎকার শুরু করেন। এসময় কোচের হেলপার-সুপারভাইজারসহ অন্যান্য যাত্রীরাও তার সঙ্গে যোগ দিয়ে চিৎকার করতে থাকেন। পরবর্তীতে রাতে মহাসড়কে টহলে থাকা শেরপুর থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসলে অন্য ডাকাত সদস্যরা পালিয়ে গেলেও একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। পরে থাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাত সদস্যের নিকট থেকে লুণ্ঠিত নগদ চার হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত চাকু ও কাঠের বেলুন উদ্ধারের পর তা জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে দাবি করে পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সেইসঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তার এবং খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানান তিনি।