বগুড়া সংবাদ : বগুড়ায় যৌতুকের জন্য ৬ মাসের অন্তঃসত্তাবস্থায় নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগে প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে ভুক্তভুগী ববি আক্তার বৃষ্টি।
মঙ্গলবার (৮জুলাই ) বেলা ১২টায় বগুড়া প্রেসক্লাবে স্বামী, শ্বশুড়বাড়ির লোকজনকে বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ববি আক্তার বৃষ্টি বলেন, যৌতুকের জন্য ৬ মাসের অন্তঃসত্তাবস্থায় নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে মঙ্গলবার বেলা ১২টায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছে ববি আক্তার বৃষ্টি।
তিনি বলেন, বগুড়া সদরের বিসিক ফুলবাড়ি এলাকার জুলফিকার আলী জুলুর ছেলে আতিক হাসান রাহুলের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাহুলের টাকার প্রয়োজন হলে আমার বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় আমি আমার বাবার নিকট এবং বাবার ব্যবসার টাকা চুরি করে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। টাকা নেওয়ার পর থেকে সে আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে অস্বীকার করে এবং অন্যান্য মেয়ের সাথে সর্ম্পকে জড়ায়। আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে আমাদের বিয়ের কথা বললে সে নানান ধরনের তালবাহানা করতে থাকে। আমাদের সর্ম্পকের কথা তার পরিবারও জানে। ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে আমার মা আমাদেরকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। কিছুদিন পর তখন আমার মা রাহুলের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে প্রস্তুতি নেন। উভয় পরিবারের সম্মতিতে আমাদের ২০২৫ সালের ১১ জানুয়ারি বিয়ে হয়। আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং আমি ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। বিয়ের কয়েকদিন পরেই আমার শ্বশুড় বাড়ির লোকজন আমার মায়ের নিকট ১০ লাখ টাকা যৌতুক চায়। কিন্তু আমার বাবা মারা যাওয়ায় আমার মায়ের পক্ষে ঐ টাকা দেয়া সম্ভব হয়না। যৌতুক দিতে না পারায় আমাকে প্রতিদিনই নির্যাতন করতে থাকে। আমি আমার শুশুড় শ্বাশুড়ির হাত পা ধরে অনেক কাঁন্না করেছি কিন্তু কিছুতেই তাদের মণ গলেনি। আমার বাবা না থাকায় নির্যাতন সহ্য করেও আমি তাদের বাড়িতে ছিলাম।
আমার শ্বশুড় ও শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা আমাকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করতে থাকে। গত ২৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আমাকে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন বাড়ি থেকে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে আমাকে একা বাসায় রেখে বের হয়ে যান। পরে বিকেল ৪টার দিকে আমাকে ফোন করে রানা প্লাজায় যেতে বলে। আমার ভাসুর রানা আমাকে ফোন করে বলেন বৃষ্টি আমাদের ভাগ্নে বাধনকে (আমার ননদের ছেলে) পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা সবাই তাকে খুঁজেছি তুমি রানা প্লাজার সামনে আসো। আমি সরল বিশ্বাসে তার কথা বিশ্বাস করি এবং বাসায় কাউকে না দেখে আমি রানা প্লাজার সামনে যাই। সেখানে গিয়ে প্রথমে কাউকে দেখতে পাইনা। আমি ফোন করলে কেউ আমার ফোনও ধরেনা। আমি একাই দাঁড়িয়ে থাকার সময় একটু পর তাদের পুরো পরিবারের সকল সদস্য এসে আমাকে হঠাৎ করে মারধর শুরু করে। এ সময় পথচারি ও পুলিশ এগিয়ে আসলে আমার শ্বশুড় ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন আমাকে মিথ্যা অপহনকারী সাজিয়ে আমি নাকি বাধনকে অপহরন করেছি এই বলে অপবাদ দেয়। বাধন আমার ননদের ছেলে কিন্তু তার কাছেও কেউ কিছু জানতে চায়নি এবং আমাকে কথা বলার কোন প্রকার সুযোগই সেদিন দেয়া হয়নি। আমাকে শতশত জনতার সামনে অপহরনকারী সাজালে কেউ আসল ঘটনা জানতে চায়নি বা প্রতিবাদ করেনি। পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে যায় এবং আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিবে বলে থানায় সারারাত বসিয়ে রাখে। পরেরদিন আমাকে আদালতে চালান করে দেয়। আমি আদালতে গিয়ে জানতে পারি আমার শ্বশুড় জুলফিকার আলী জুলু আমার বিরুদ্ধে অপহরন মামলা করেছে। এদিকে আমি অপরহরনকারী হিসেবে আমার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে সবাই আমাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখতে থাকে আমার সাথে আমার অনেক আত্মীয়স্বজনা পর্যন্ত সর্ম্পক ছিন্ন করেন। এ ঘটনার ১৪ দিন পর আমার মা আমাকে জামিনে বের করেন কিন্তু আমি আমার কলেজ ও পরিচিতিদের কাছে যেতে পাচ্ছিনা। এমনকি কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে পরীক্ষা দিতেও বাধা সৃষ্টি করে। আমার পেটে ৬ মাসের বাচ্চা নিয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে থাকি। আমি তাদের অনেক অনুরোধ করে কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করি। আমি বর্তমানে মহিলা কলেজের পাশে একটি মেসে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছি। তারা আমার কোন খোঁজ খবর রাখেনা। এমনকি বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে। আমি তাদেও নামে মামলা করলে তারা আমার বিধাব মা ও আমার ছোট দুই বোনকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করাবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে।
আমার উপর যে নির্যাতন হয়েছে তার জন্য আমার স্বামী, শ্বশুড় ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজনকে গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচার করার জন্য প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করছি।