[caption id="attachment_1432" align="alignnone" width="1482"] বগুড়ায় চলছে উৎসব মুখোর পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলা[/caption]
বগুড়া সংবাদ : আজ বুধবার ব্যাপক উৎসব মুখোর পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বা ফাল্গুনের প্রথম বুধবার এ মেলা মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথা অনুযায়ী আজও একদিনের এ ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ মেলা বসে। মেলায় সকাল থেকে লাখো মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই জমে উঠে মেলা।প্রায় চারশো বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার একইস্থানে বসবে বউমেলা।জেলা সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত।প্রায় চারশো বছর আগের ঘটনা। মেলাস্থলে ছিলো একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে। প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার উক্ত স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে।এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয় এই মেলা। মেলাটি একদিনের। তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন। এ মেলাকে সামনে রেখে আশপাশের প্রতিটি বাড়ি মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায়। ঈদ বা অন্য কোনও উৎসবে দাওয়াত না দিলেও পোড়াদহ মেলায় দাওয়াত দেয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।মেলায় প্রসিদ্ধ হলো বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, কাঠ বা স্টিলের ফার্নিচার, বড়ই (কুল), কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাব ও খাদ্যদ্রব্য কেনাবেচা হয়। এ ছাড়া বিনোদনমূলক সার্কাস, নৌকা, মাইক্রো-কার খেলা, যাদু ও নাগোরদোলার আয়োজন করা হয়। মেলাটি আজ বুধবার হলেও আগেই বেশকিছু দোকান ঘর স্থাপন করা হয়েছে। হরেক রকম হাজার হাজার মণ মিষ্টি তৈরি করার প্রস্তুতি চলে আগে থেকেই।মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকত দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইর মাছ। তবে, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বাঘাইড় মাছকে মহাবিপন্ন ঘোষণা করায় তিন বছর ধরে মাছটি বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে।এ কারণে এই গত তিন বছর হলো মেলায় বাঘাইড় মাছ দেখা যাচ্ছে না। তবে যথারীতি রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, বিগ হেড, ব্লাড কার্প, ব্লাড কার্প, আইড়, সিলভার কার্প ও কার্পসহ সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ উঠেছে। আকার ও ওজনভেদে কাতল ৪০০ থেকে ৮৫০টাকা, বিগহেড ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, সিলভার কার্প ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বোয়াল ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা, চিতন ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, গ্লাস কার্প ৩৫০ থেকে ৪৮০ টাকা।পাঙ্গাস ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা, ব্লাড কার্প ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং আইড় মাছ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে৷ এবারের মেলায় ৪০ কেজি ওজনের সবচেয়ে বড় সাইজের পাখি মাছ এনেছেন টাঙ্গাইলের শরীফ তালুকদার। তিনি প্রতি কেজি দেড় হাজার টাকা হিসেবে মাছটির দাম হাঁকিয়েছেন ৬০ হাজার টাকা।দাম নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতার ভিন্নমত থাকলেও বেচাকেনা চলছে জমজমাট।এবারে মেলায় প্রতি বছরের মতো বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রী ছিল আরেক আকর্ষণ। মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি উঠেছিল দোকানগুলোতে। ১২ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি বানিয়েছেন আল আমিন৷ তিনি জানান, মেলা উপলক্ষ্যে ১২ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি বানিয়েছি। ছয় হাজার টাকা দাম পেলে বিক্রি করে দিব। পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ বড় সাইজের মাছের পরেই বড় এবং বিভিন্ন আকৃতির মিষ্টির। এছাড়া রয়েছে নাগরদোলা, সার্কাসসহ ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইড। গাবতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের একটি টিম কাজ করছে। এছাড়া যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। মেলায় জুয়া এবং অশ্লীল নৃত্যের অভিযোগ শোনা যাচ্ছিলো, এর কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম অভিযোগ পাওয়ার পর গতকালই আমরা পর আমরা সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি। মেলায় আবারও এরকম কোনো ঘটনার খবর পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো।মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, মেলাটি মূলত মাছের। মেলায় প্রায় ৫০০টি মাছের দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলোতে একদিনে ৫ কোটি টাকার মতো লেনদেন হবে। মেলার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।